কোরআনের আলোয় আলোকিত হওয়ার মাস

রমজান বাকি ১১টি মাসের মতো নয়। এ মাস মহামহিমান্বিত। এ মাস বরকত, রহমত ও মাগফিরাতে ভরা। এর প্রতিটি মুহূর্ত অতি মূল্যবান। কিন্তু এ মাসের এই বৈশিষ্ট্য-শ্রেষ্ঠত্ব কেন? কেন সে মানবজীবনের মহাসম্পদ? রমজানের এ স্বাতন্ত্র্যতা প্রভুর অমীয় প্রেমময়বাণী কোরআনের কারণে। রমজানের বরকতময় রজনীতে তিনি সূচনা করেছেন তাঁর প্রেম উপ্যাখ্যান। তাঁর পরম বন্ধু রাসুলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন প্রেমালাপের প্রথম শব্দ ‘ইকরা’- পড়। পড় তোমার মহামহিম প্রভুর নামে। শাহরু রমাদানাল্লাজি উনজিলা ফিহিল কোরআন। কোরআন নামের প্রভুর প্রেমপত্র বান্দার কাছে এসেছে রমজানে। তাই তো রমজান এত গৌরবময়। রমজান প্রভুর প্রেমময় বাণী কোরআন নামের প্রেমসাগরে ডুব দেয়ার মাস। রমজান প্রভুর প্রেমপত্র পাঠ ও উপলব্ধির মাস। কোরআনের আলোতে আলোকিত হওয়ার মাস। তাই তো দেখি, রাসুল (সা.) কোরআন পাঠে হয়েছেন বেশি মনোযোগী। নির্দেশ দিয়েছেন সাহাবিদের পাঠের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার জন্য। প্রতি রমজানে জিব্রাঈল (আ.) আসতেন রাসুলের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য। জিব্রাঈল তেলাওয়াত করতেন, রাসুল (সা.) করতেন শ্রবণ। রাসুল তেলাওয়াত করতেন, জিব্রাইল (আ.) করতেন শ্রবণ। কিন্তু কোরআন কেবল তেলাওয়াতের জন্য নয়। কোরআন উপলব্ধি এবং গবেষণার জন্য। কোরআনের উদ্দেশ্য হল তার মর্মবাণী জানা, তার গূঢ় রহস্য উদ্ঘাটন করে সে অনুযায়ী নিজেকে, সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালিত করা। কোরআনের আলোতে স্নাত হয়ে নিজে ও সমাজকে আলোকিত করা। কোরআনের শাশ্বত বিধান উপলব্ধি করে সে আলোতে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালিত করে এ মর্তের পৃথিবীকে স্বর্গের ধারায় পরিণত করা। তা না হলে মহাপ্রভুর বিজ্ঞানময় পত্র কোরআন না বুঝে কেবল তেলাওয়াত করলে কোরআনের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা আদৌ সম্ভব হবে না। যুগ যুগ আমরা অন্ধকারে ডুবে আছি।
মারামারি-হানাহানি, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ, নির্যাতন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, মিথ্যা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, নারী নির্যাতন, আত্মকলহ, কাম, ক্রোধ, লোভ, লালসা, আত্মম্ভরিতাসহ এমন কোনো অনাচার নেই যা আমাদের সমাজে হচ্ছে না। চারিদিকে শুধু আঁধার আর আঁধার। কোথাও নেই আলো। নেই প্রীতি-প্রেম, ভালোবাসা, পৃথিবী নামের সংসারে আজ শান্তির বড় অভাব। মানুষ আত্মভোলা, দিশেহারা হয়ে জীবনযাপন করছে। পথিক হারিয়েছে পথ। অথচ কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে ‘হুদাললিন নাস ওয়া বায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফোরকান’। কোরআন মানুষের দিশারী, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য নির্ণয়কারী হিসেবে। কোরআন আমাদের চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও কেন আমার পথহারা? কেন ডুবে আছি অন্ধকারে? কেন গোটা পৃথিবী অনাচারে ভরা? কেন এ সুন্দর পৃথিবী বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে? এর কারণ একটাই- আমাদের কাছে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা কোরআন আছে; কিন্তু কোরআনের আলো নেই আমাদের অন্তরে। কোরআন নাজিলের মাস হতে পারে কোরআনের আলো আহরণের জন্য মহানিয়ামক। রমজানকে কেন্দ্র করে আমরা কোরআনের আলোতে আলোকিত-বিকশিত হতে পারি। গ্রহণ করতে পারি কোরআন গবেষণার কর্মসূচি। কোরআনের অর্থ না বোঝার কারণে নামাজের যে মজা, কোরআনের তেলাওয়াত শ্রবণে যে স্বাদ, তা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ কোরআনের বিধি-বিধান, তার ঘটনাবলি জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনাসহ কোরআনের নানা বিষয় যদি আমরা বুঝতে পারতাম তাহলে আমাদের নামাজ হতো ভিন্ন ধরনের নামাজ। নামাজ হতো মোমিনদের হৃদয়ের মিরাজ। এভাবে রচিত হতো স্রষ্টার সঙ্গে সায়েমের নিবিড় সম্পর্ক।
লেখক : সাইখুল হাদিস খতিব ও প্রাবন্ধিক

No comments

Powered by Blogger.