সুন্দরবনের আরও দুই দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পণ

সুন্দরবনের আরও দুটি দস্যু বাহিনী শনিবার আত্মসমর্পণ করেছে। আলিফ ও কবিরাজ বাহিনীর ২৫ সদস্য এদিন পটুয়াখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আলিফ বাহিনীপ্রধান মো. আলিফ মোল্লা ওরফে দয়াল ও কবিরাজ বাহিনীপ্রধান মো. ইউনুচ আলী শেখ ওরফে কবিরাজের নেতৃত্বে তারা আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তারা দেশি-বিদেশি ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার ১১০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। ‘মাস্টার বাহিনী’র ১০ সদস্যের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৩১ মে সুন্দরবনের দস্যু বাহিনীর সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার যাত্রা শুরু হয়। যমুনা টেলিভিশন এর মধ্যস্থতা করে। শনিবার আলিফ ও কবিরাজ বাহিনীর অস্ত্র জমা দেয়ার মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ১২টি দস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করল। পটুয়াখালী শিল্পকলা একাডেমি ভবনে দুপুরে আলিফ ও কবিরাজ বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পশ্চিম সুন্দরবনের শিবসা এবং পূর্ব সুন্দরবনের মংলা ও হারবাড়িয়া এলাকায় জেলেদের অপহরণ, ডাকাতি ও লুটসহ নানা অপরাধে যুক্ত ছিল তারা। বঙ্গোপসাগরেও এই দুই বাহিনীর দৌরাত্ম্য ছিল। পরে র‌্যাব এই ২৫ জনকে অস্ত্র-গুলিসহ শরণখোলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সেই সঙ্গে ওই থানায় দস্যুতা ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন র‌্যাব-৮-এর ডিএডি মো. আমজাদ হোসেন। দুই বাহিনীর জমা দেয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১০টি বিদেশি একনলা বন্দুক, ৭টি বিদেশি দোনলা বন্দুক, ৪টি পয়েন্ট টু টু বোর বিদেশি এয়ার রাইফেল, ৬টি ওয়ান শুটার গান ও ৪টি কাটা রাইফেল। এ ছাড়া তারা এক হাজার ১১০ রাউন্ড গুলি জমা দেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশের জলসীমা এবং বঙ্গোপসাগর জলদস্যুমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর।
তার দিকনির্দেশনায় র‌্যাব নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় একাধিক জলদস্যু বাহিনী র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। সরকার তাদের পুনর্বাসন করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এখনও যেসব দস্যু আত্মসমর্পণ করেনি, যারা জেলেদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে, তাদেরও আত্মসমর্পণের জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। দস্যুদের আত্মসমর্পণে ভূমিকা রাখার জন্য যমুনা টেলিভিশনের ভূয়সী প্রশংসা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আহমেদ। সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান তালুকদার, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মোশারফ হোসেন, জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক ছিদ্দিকী, বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. আমরাম হোসেন, কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা বসির উদ্দিন আহমেদ, পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র‌্যাব-৮-এর (বরিশাল) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আনোয়ার-উজ জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মেজর আদনান আহমেদ। আত্মসমর্পণকারী আলিফ বাহিনীর সদস্যরা হলেন : আলিফ মোল্লা ওরফে দয়াল (৪২), রেজাউল শেখ ওরফে ছোট (২৮), সফিনুর রহমান সফি (২০), আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে আবদুল্লাহ (৪০), হজরত আলী বরকন্দাজ ওরফে জামাইগুটি (৩৮), শাহিনুর আলম ওরফে শাহীন (২৯), জমির আলী জমু (৪৬), আল আমীন মোল্লা (৩৫), মো. তাইজেল ওরফে বড়ভাই (২৭), সিরাজুল ইসলাম ওরফে সুমন (৪১), আলমগীর গাজী (২৬), কামাল শেখ (৩৮), হোসেন আলী ওরফে ভাগ্নেœ (২৮), সেলিম মোড়ল (৩৯), হজরত আলী গাইন ওরফে আঙুল কাটা হজরত (৩৯), পিয়ার আলী (৩৭), লিটন বিশ্বাস ওরফে দেওয়ান (৩২), হাবিবুর রহমান ওরফে বাছা (২৭) ও এনামুল গাজী ওরফে এনা (৩৫)। এদের বাড়ি খুলনা, মুন্সীগঞ্জ ও বাগেরহাটে। কবিরাজ বাহিনীর সদস্যরা হলেন : ইউনুচ আলী শেখ ওরফে কবিরাজ (৩০), নাজিম শেখ (৩৮), আলতাব উদ্দিন ফকির (৩৩), আবু শেখ (৪৬), সেলিম হাওলাদার (৩০) ও আশরাফ হোসেন ওরফে রাজু (৩৭)। এদের বাড়ি সাতক্ষীরায়। র‌্যাব জানায়, আলিফ মোল্লা দল গঠন করে ১৯৯৭ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন এলাকায় দস্যুতা চালিয়ে আসছে। আর তাদের টার্গেটে উপকূলের সাধারণ ও জেলে পেশার মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১২ সালে ইউনুচ আলী ওরফে কবিরাজ জলদস্যু বাহিনী গঠন করে বঙ্গোপসাগরের একাধিক জেলের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করেছে। র‌্যাব-৮-এর একটি দল তাদের টার্গেট করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালায়। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সুন্দরবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই বাহিনীর ২৫ দস্যুকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। র‌্যাব শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ১১ মাসে সুন্দরবনের কুখ্যাত ১০টি বাহিনীর ১০৭ দস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। তারা ২১৬টি অস্ত্র ও ১১ হাজার ৩৮০ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়েছে। র‌্যাব-৮-এর কঠোর অভিযানের কারণে কোণঠাসা হয়ে দস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার আরও দুই বাহিনীর ২৫ দস্যু আত্মসমর্পণ করল। এ ছাড়া র‌্যাব-৮ এ পর্যন্ত ৩২৬ দস্যুকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে ৯২০টি অস্ত্র ও ২৪ হাজার ৬৩৯ রাউন্ড গুলি। এখন পর্যন্ত মাস্টার বাহিনীর ১০, মজনু ও ইলিয়াস বাহিনীর ১১, সাগর বাহিনীর ১৩, খোকাবাবু বাহিনীর ১২, আলম ও শান্ত বাহিনীর ১৪, নোয়া বাহিনীর ১২, জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০, ছোট রাজু বাহিনীর ১৫ এবং সর্বশেষ আলিফ বাহিনীর ১৯ ও কবিরাজ বাহিনীর ৬ দস্যু আত্মসমর্পণ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.