বর্ষবরণে বাজল অসাম্প্রদায়িকতার সুর

দুঃসহ অতীতকে বিসর্জন আর অপশক্তিকে দমন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায় উদ্‌যাপিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪। সব দুঃখ-বেদনাকে ঝেড়ে ফেলে পরম আনন্দে তাই বাঙালি স্বাগত জানিয়েছে নতুন বছরকে। জমে থাকা দুঃখ-গ্লানি বিন্দুমাত্র ছোঁয়ার সাহস পায়নি এই দিনে। পুরোনো সব জঞ্জাল পেছনে ফেলার আহ্বান ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়। দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে গণভবনে আজ শুক্রবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পুরোনো বছরের জঞ্জাল সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকুক, দেশে শান্তি বিরাজ করুক, সেই প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। দিনের প্রথম প্রভাতেই রমনার বটমূলে ভোরের সূর্যের আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গেই ভোর ৬টা ১০ মিনিটে সরোদবাদন দিয়ে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। এরপর কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, যেখানে ছিল সব বাঙালির নতুন বছরে সব ভালোর প্রত্যাশা। ছিল হাজারো মানুষের কণ্ঠে দেশ আর দশের মঙ্গল কামনা। মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর’। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বাঘ, ফুল, পাখির প্রতিকৃতি। সবার সামনে থাকে সমৃদ্ধির প্রতীক কালো হাতি, যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলার ঐতিহ্যকে। পেছনে ছিল অশুভ আর অমঙ্গলের প্রতিকৃতি কালো দৈত্য। সব মিলিয়ে জঙ্গিবাদকে দূরে ঠেলে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এ সবকিছুর সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রাখা হয় সূর্য। সেটি পেছনে ঘোরালে দেখা যায় একটি কালো মুখ। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নারীরা পরেছেন লাল-সাদা শাড়ি। হাতভর্তি কাচের চুড়ি।
চুলে বেলি ফুল। শিশুরাও সেজেছে লাল-সাদার সাজে। পুরুষদের সাজও তা-ই। বাংলার চিরায়ত সাজে নববর্ষকে বরণ করছে সবাই। সব জায়গায় রঙিনের ছড়াছড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে সকাল নয়টার দিকে চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে এ দেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, এ কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কুসংস্কার, অন্ধকারাচ্ছন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী যে অপশক্তি আছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে আমরা তাদের নির্মূল কামনা করি। সেই সঙ্গে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করি। এটা হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য।’ তিন দশক ধরে বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। গত বছর ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে এ শোভাযাত্রা। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। কারণ, বাংলাদেশে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়, সেটা কেবল বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করে নয়, পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের মঙ্গল কামনা করে করা হয়।’ মঙ্গল শোভাযাত্রা রূপসী বাংলা মোড় হয়ে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হয় সকাল ১০টার পর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। তবে নিরাপত্তার কঠোরতায় উৎসবে আসা অনেককে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ব্যাগ নিয়ে টিএসসি ও রমনার বটমূলে যেতে না দেওয়ায় কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে এক মঞ্চে হাজার শিল্পীর গান দিয়ে বর্ষবরণ করে সুরের ধারা ও চ্যানেল আই।

No comments

Powered by Blogger.