টার্মিনালে আটকে ছিল একটি পরিবার

গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে বুধবার ছিল সুনসান নীরবতা। যাত্রী নেই, নেই হইচই। তবে দিগন্ত বাস কাউন্টারের সামনে টমেটো দিয়ে মুড়ি মাখাচ্ছিলেন এক নারী। অপলক তা দেখছিল ছোট দুটি ছেলে। কাছে গিয়ে জানা গেল, ওই নারীর নাম রোকসানা। রায়হান আর হাসান নামের ছেলে দুটির খালা তিনি।
দুপুরে ভাতের বদলে মুড়ি কেন?
এই প্রশ্নের জবাবে রোকসানা বলেন, ‘পাশের হোটেল সব বন্ধ। ভাত পাব কোথায়?’
পাশে বসা মাঝ বয়সী একজন তাজ মো. কবির বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ভাই, যাব কোথায়? দুই দিন ধরে এখানে আছি। পরিবার নিয়ে এত দিন ঢাকায় থাকতাম। এখন আর ঢাকায় থাকব না। বাড়িভাড়া মিটিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে একেবারে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে চলে যাচ্ছিলাম। সঙ্গে বউ রওশন আরা, দুই ছেলে রায়হান ও হাসান। আরও আছেন বাচ্চাদের খালা রোকসানা ও তাঁর স্বামী।’ কবিরের ভাষ্যমতে, মিরপুর ১২ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা। ওখানে কারচুপির কাজ করতেন। ঢাকায় আয় কমে যাওয়ায় সাতক্ষীরায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কবির। বাসা ছেড়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গাবতলী বাস টার্মিনালে যান তাঁরা। সঙ্গে হাঁড়িপাতিল আর কাপড়ের ছয়টি বস্তা। কিন্তু পরিবহনশ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা। ঢাকায়ও থাকার জায়গা নেই, আবার সাতক্ষীরাও যেতে পারছেন না।
অগত্যা বাস কাউন্টারেই আশ্রয় নেয় পুরো পরিবার। প্রথম দুই দিন ভাত খেলেও গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে টার্মিনালের হোটেলগুলো বন্ধ। সে কারণে হাতের কাছে যা ছিল তা খেয়েই কেটেছে পরিবারটির দিন। গতকাল শ্রমিকদের কর্মবিরত প্রত্যাহারের পর যানবাহন চালু হয়। এরপর সন্ধ্যায় পরিবারটি ঢাকা ছেড়ে যায়। টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার আগে রওশন আরা বলেন, ‘ভাই, বাথরুম করতেই ২০০ টাকা গেছে। তবে কষ্ট হচ্ছে বাচ্চা দুটোর। আর কোনো দিন ঢাকায় আসব না।’ আবার ফিরে যাওয়ার সময় আতিথেয়তা করলেন কবিরও। মুড়ির থালা এগিয়ে বললেন, ‘আমাগের সাথি দুটো মুড়ি খান।’

No comments

Powered by Blogger.