আসুন, সবাই একযোগে স্বপ্ন পূরণে কাজ করি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিবাদের সময় এখন নয়। ক্ষুদ্র চিন্তায় সন্তুষ্ট থাকারও সময় এটা নয়। এখন দরকার যে স্বপ্ন আমাদের হৃদয়ে রয়েছে, তা সবার সঙ্গে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া। এখন চাই যে আশা আমাদের হৃদয়ে রয়েছে তা প্রকাশের সাহস এবং আশা ও স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য আস্থা।’ গত মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া এক ভাষণে এ কথা বলেন ট্রাম্প। এ সময় ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্যদের প্রতি স্বপ্নপূরণে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পাঁচ সপ্তাহ পর দেওয়া এ ভাষণ ছিল ট্রাম্পের আগের সব ভাষণ ও টুইটার মন্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প এক ভগ্নপ্রায় ও দুর্দশাগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র এঁকেছিলেন, যে দেশের রাস্তায় রাস্তায় ‘হত্যালীলা’ এক নৈমিত্তিক ব্যাপার।
সে ভাষণের জন্য ট্রাম্প সমালোচিত হয়েছিলেন। বস্তুত তখন থেকেই তিনি নিজে ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র’ বিষয় নিয়ে বিবাদ করেছেন। মঙ্গলবার সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী ভাষণে ট্রাম্প অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি প্রশ্নে তাঁর প্রস্তাবিত কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তবে অনেক নরম ও কম বিভেদাত্মক স্বরে বক্তব্য পেশ করলেও মৌলিক অবস্থান থেকে খুব একটা সরে আসেননি। এদিন দুপুরে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প অভিবাসন প্রশ্নে তাঁর অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত করেন। সিএনএন জানায়, বিভিন্ন টিভি নেটওয়ার্কের উপস্থাপকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, অবৈধ অভিবাসীদের ঢালাও বহিষ্কারের বদলে অধিকাংশকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে তিনি আগ্রহী। কোনো অপরাধ না করে থাকলে ও বকেয়া কর শোধ করলে তাঁদের স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার দেওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির অতিরক্ষণশীল সদস্যদের আপত্তির কারণে তিনি ভাষণে সে কথা তোলেননি। অভিবাসন সংস্কার প্রশ্নে ট্রাম্প ভাষণে বলেন, তিনি কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ‘গুণাগুণের ভিত্তিতে’ অভিবাসী গ্রহণে আগ্রহী। মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণের ব্যাপারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেও নির্মাণ খরচ মেক্সিকোকে বহন করতে হবে—এমন দাবি এদিন আর তোলেননি ট্রাম্প।
আবার ক্ষমতা গ্রহণের দিনই ওবামার স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্যবিমা আইন বাতিল করার ঘোষণা অতীতে দিলেও মঙ্গলবারের ভাষণে উভয় দলের সদস্যদের কাছে এ প্রশ্নে যৌথভাবে কাজ করার আবেদন রাখেন তিনি। ট্রাম্প এ সময় একবারও রাশিয়া বা ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করেননি। তবে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে নতুন আঁতাত গড়ে তোলার পক্ষে মত দেন। মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার কথিত হস্তক্ষেপ ও পুতিনের সঙ্গে তাঁর গোপন যোগাযোগের অভিযোগ এখনো ট্রাম্পকে তাড়া করে ফিরছে। গত পাঁচ সপ্তাহে ট্রাম্প একের পর এক মিথ্যাচার করেছেন। কংগ্রেসে মঙ্গলবারের ভাষণ সেদিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। তবে আদৌ কোনো মিথ্যাচার ছিল না, তা বলা যাবে না। নিউইয়র্ক টাইমস-এর হিসাবে, অন্তত ১৩টি ক্ষেত্রে ট্রাম্প হয় খুঁতযুক্ত কিংবা সত্যের অপলাপ হয় এমন তথ্য উপস্থিত করেন। এদিকে জরিপ বলছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির সমালোচনা সত্ত্বেও ট্রাম্পের ভাষণ যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষের কাছে ভালো লেগেছে। সিএনএনের নেওয়া এক জরিপ অনুসারে প্রতি ১০ জনের ৭ জনই এ ভাষণে সন্তুষ্ট।

No comments

Powered by Blogger.