বেহাল সড়ক, দুর্ভোগ

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাকা সড়কগুলোর অবস্থা এখন বড়ই করুণ। বেশির ভাগ সড়ক ভাঙাচুরা, এবড়োখেবড়ো আর খানাখন্দে ভরা। এ অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। খিয়ারজুম্মা বাজার থেকে আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) পর্যন্ত সড়কটির দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। আলমপুর ইউনিয়নের পূর্ব দিকের ১২টি গ্রামের সঙ্গে তারাগঞ্জ সদরে যোগাযোগ রক্ষার এটি একমাত্র সড়ক। ওই গ্রামগুলোর প্রায় ১২ হাজার মানুষ ছাড়াও ট্রাক, টেম্পু ও রিকশা সড়কটি দিয়ে তারাগঞ্জ সদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। পাঁচ বছর আগে সড়কটি পাকা করা হলেও বর্তমানে এটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকার লোকজনের অভিযোগ সড়কের কাজ নিম্নমানের হওয়ায় সড়কের এই হাল। বর্তমানে বেশির ভাগ সড়কের কার্পেট উঠে গেছে। আবার কোথাও কোথাও ইট উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  ওই সড়কের টেম্পোচালক শেরমস্ত গ্রামের মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভাইজান এমতন খারাপ রাস্তা কোনোটে দেখো নাই। গাড়িকোনা চলার সময় জীবন বাইর হয়া যাবার চায়।’ খিয়ারজুম্মা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই সড়ক কোনার কি বাপ-মাও কায়ও নাই। সড়ক কোনার এমতন অবস্থার জন্য হামাক আর কদ্দিন যন্তনা ভোগ করবার নাগবে।’ বেহাল দশা চিকলীর মোড়Ñটকেয়া সড়কটিরও। ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি দিয়েও যানবাহন ও সাতটি গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষ চলাচল করে। বর্তমান সড়কটির চিকলীর মোড় এলাকা ১ কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে ও গর্তে ভরে যাওয়ায় যানচলাচল তো দূরের কথা সাধারণ মানুষেরও হেঁটে চলাচল করা দুষ্কর।  ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী দোয়ালীপাড়া গ্রামের একরামুল হক বলেন, ‘চিকলীর মোড় এলাকার রাস্তা কোনার এক হাত বাদ পিচ উঠি যেয়া বড় বড় গর্ত হইছে। বৃষ্টি হইলে গর্তগুলাত পানি জমে। তখন এদি হামরা হাইটপার পাই না।’ টকেয়া গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুকনা মৌসুমে তো ধুলার মধ্যে কষ্ট করি এই রাস্তা কোনা দিয়া চলাফেরা করি।
কিন্তুক বর্ষার সময় হাঁটুপানি-কাদার জন্য এদি হামরা হাইটপার পারি না।’  বামনদীঘি-পারঘাট ৮ কিলোমিটার সড়কটিও একটি ব্যস্ত সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ট্রাক, টেম্পো রিকশাসহ হাড়িয়ালকুটি ইউনিয়নের ২৪ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সড়কটি সংস্কার না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। আবার কোথায় কোথায় ইট উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  মেনানগর গ্রামের রিকশাচালক মোকাম্মেল হক বলেন, ‘পারঘাট গ্রামের গোড়োত ১ কিলোমিটার রাস্তাকোনায় হইল হামার যন্তনা। একিনা জাগা দিয়া রিকশা চলবার সময় পেটের নাড়িভুঁড়ি নড়ে। রিকশা কোনারও ক্ষতি হয়। এই জায়গা কোনা পাকা করলে ক্ষতি কি হয়।’  ইকরচালী বাজার-ডাঙ্গাপাড়া পাকা সড়কটি দিয়ে মেনানগর, মাটিয়ালপাড়া, কুঠিয়ালপাড়া, দোলাপাড়া, সরকাপাড়া, মধ্যপাড়া, ভূতপাড়া, ফকিরপাড়া, গ্রামের মানুষ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। কিন্তু সড়কটির ভেঙে গিয়ে দোলাপাড়ার গ্রামের সরু হয়ে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে গর্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। এ ছাড়া তারাগঞ্জ বাজার থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, তারাগঞ্জ বাজারের অগ্রণী ব্যাংকের মোড় হতে কেল্লাবাড়ি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, তারাগঞ্জ বাজার থেকে পুরাতন চৌপথী পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, মাঝেরহাট থেকে ইকরচালী বাজার পর্যন্ত ২ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং ও ইট উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার চিত্র তুলে ধরে কয়েক মাস আগে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় সড়কগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলী হায়দার জামান বলেন, ‘বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে অন্য রাস্তাগুলো সংস্কার করা হবে।’

No comments

Powered by Blogger.