সকাল থেকে সীমাহীন দুর্ভোগ মানুষের

সারা দেশে পরিবহনশ্রমিকদের ধর্মঘট চলাকালে গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ধর্মঘটীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়ে শাহ আলম নামের এক পরিবহনশ্রমিক সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এদিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত গতকালও সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে পরিবহন-সংকটে সীমাহীন ​দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ পথের কোনো বাস চলেনি। রাজধানীতে চলেছে শুধু বিআরটিসির বাস। রিকশা, অটোরিকশা, লেগুনা, পিকআপ ভ্যান ও রিকশা ভ্যানে বাড়তি ভাড়া গুনে নগরবাসীকে চলাচল করতে হয়েছে। ধর্মঘটে গতকালও চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষ, এসএসসি পরীক্ষার্থী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। যানবাহন না পাওয়ায় অনেকে অনেক দূর হেঁটে গেছেন। কর্মস্থল বা গন্তব্যে পৌঁছেছেন বিলম্বে।
কোথাও কোথাও পরিবহনশ্রমিকেরা যান চলাচলে বাধাও দিয়েছেন। মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর মামলায় এক বাসচালকের যাবজ্জীবন ও ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। এতে সারা দেশের সড়কযোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ শুরু হয় মানুষের। গাবতলীতে গতকালের সংঘর্ষ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার সৈয়দ মামুন মোস্তফা বলেন, মঙ্গলবার রাতে সংঘর্ষের পর গতকাল সকালে পরিবহনশ্রমিকেরা টার্মিনালের সামনের সড়কে ভাঙচুর শুরু করেন। তাঁরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে দেন এবং যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেন। তাঁরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও একটি ট্রাক ভাঙচুর করেন। ট্রাকটিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ছিল। তারা প্রবেশপত্র দেখালেও শ্রমিকেরা ট্রাকটি আটকে দেন এবং পরীক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে ট্রাক ভাঙচুর করেন। এসব ঘটনার পর পুলিশ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে বৈশাখী পরিবহনের চালক শাহ আলম আহত হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১০-১২ জনকে আটক করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ব্লকের আবাসিক সার্জন জেসমিন নাহার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শাহ আলমকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, শাহ আলমের বুকে ও পেটে অনেক ছররা গুলির জখম ছিল, শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। গতকাল গাবতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙা ইটের টুকরা পড়ে আছে। কোনো যানবাহন চলছে না। অসংখ্য মানুষ হেঁটে চলেছে। হেঁটে গন্তব্যমুখী মো. আরিফ বলেন, তাঁর বাড়ি ধামরাইয়ের কালামপুরে। তিনি যাবেন ধানমন্ডি। ভেঙে ভেঙে রিকশাভ্যান ও রিকশায় আমিনবাজার সেতুর গোড়া পর্যন্ত এসেছেন। ২০ মাইলের মতো পথ আসতে ৪০০ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। বাকি পথ কীভাবে যাবেন জানেন না। সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় মঙ্গলবারের তুলনায় গতকাল অপেক্ষমাণ যাত্রী কম দেখা গেছে। যদি বাস ছাড়ে এমন আশায় কিছু মানুষ এসেছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফিরেছে। এই টার্মিনালের পরিবহনশ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মিছিল করেছেন। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে গুলিস্তানের দিকে হাঁটতে থাকা মোহাম্মদ আলী বলেন, জরুরি কাজে মঙ্গলবার ভোরে তিনি কুমিল্লা থেকে এসেছিলেন। এখন আর যেতে পারছেন না। রাতে গুলিস্তানের একটি আবাসিক হোটেলে ছিলেন। বাস ছাড়ে কি না দেখতে টার্মিনালে এসেছিলেন। বাস না পেয়ে তিনি আবার হোটেলে ফিরছেন। সকালে বিভিন্ন সড়কে ছিল হেঁটে কর্মস্থলমুখী মানুষের স্রোত। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে সব বাসের টিকিট কাউন্টার বন্ধ পাওয়া গেছে।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ ছিল সতর্ক পাহারায়। বাস চলছে না—এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় মহাখালীতেও যাত্রী ছিল কম। এদিকে রাজধানীর ভেতরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিআরটিসির বাস ছাড়া অন্য কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। বিআরটিসির বাসগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেলা তিনটার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর প্রচারিত হলেও বেসরকারি বাস তেমন চলাচল শুরু হয়নি। ওই সময় শাহবাগ মোড়ে যানবাহনের অপেক্ষায় ছিলেন শ খানেক মানুষ। তাঁদের একজন বলেন, এক স্বজনকে দেখতে মঙ্গলবার ভোরে তিনি টঙ্গী থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। দুই ঘণ্টা আগে চিকিৎসক তাঁর স্বজনকে ছাড়পত্র দিয়েছেন। মেডিকেল থেকে বেরিয়ে হেঁটে এখানে এসেছেন। এখন বাড়ি ফেরার কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে বিআরটিসির একটি বাস এলেও ভিড়ের কারণে উঠতে পারেননি। বিকেলের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বেসরকারি বাস চলাচল বাড়তে থাকে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.