যাত্রীছাউনিগুলো যাত্রীদের জন্য নয়

রাজধানীর যাত্রীছাউনিগুলোর অধিকাংশই ব্যবহারযোগ্য নয়। দোকানপাট, ভাঙাচোরা, নোংরা ও ভবঘুরেদের দখলে থাকায় জনসাধারণের ব্যবহারের সুযোগ নেই। ধানমন্ডি ২ নম্বরের যাত্রীছাউনিতে চা-পান-সিগারেট ও শিঙাড়া-ডালপুরির দোকান। ছাউনি যে আছে তা বোঝার উপায় নেই। সাতমসজিদ সড়ক ধরে এগোলে এমন দৃশ্য আরও চোখে পড়বে। শংকরের ছাউনিতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলের একটি স্থায়ী দোকান বানানো হয়েছে। দোকানি বলেন, অনেক দিন থেকেই তিনি ব্যবসা করছেন। এখানে কেউ দাঁড়ায় না। ধানমন্ডি ২৭ (নতুন ১৬/এ) নম্বর যেতে মোড়ের ছাউনির বসার জায়গাগুলো ভাঙাচোরা। এর পেছনেই চায়ের দোকান। গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের পাশের ছাউনিতে একটি ড্রাইভিং শেখার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। একটু সামনেই আছে একটি ফাস্ট ফুডের দোকান। ধানমন্ডিসহ গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, ছাউনিগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পাশের ছাউনিটি নোংরা ও ভবঘুরেদের আড্ডাস্থল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল প্রথম আলোকে বলেন, ২০টির বেশি ছাউনি ও বাস বের করা হবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে ডিজিটাল সড়ক করা হবে রাপা প্লাজা থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত। এর সঙ্গে আধুনিক ছাউনিও হবে। বাকি ছাউনিগুলোও ধরা হবে। তিনি আরও বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই কাজ ধরতে পারবেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের ছাউনি ও বসার জায়গা ভাঙা। আবর্জনা ভরা।
এর মধ্যেই দোকান চলছে। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করেন ফুটপাত বা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রিমা আক্তার বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডে যে ছাউনি আছে তা-ই তো জানতাম না।’ আসাদগেটের ছাউনিতেও স্থায়ী একটি দোকান বসানো। দোকানের কর্মচারী রাসেল বলেন, তিনি কিছু জানেন না। তবে বললেন, মালিক হয়তো ‘ম্যানেজ’ করেই বসেন। শ্যামলীর শিশুমেলার সামনের ছাউনি গত বছরের আগস্টে ভেঙে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফুটপাতে সংস্কারকাজ চলছে। কিছুদিন আগেও সেখানকার ছাউনিতে একটি ওষুধের দোকান ছিল। দোকানটি এখন নেই। শিশুমেলা থেকে আগারগাঁওয়ে যাওয়ার সড়কে বেশ কিছু যাত্রীছাউনি আছে। বেশির ভাগই ফুলের দোকান, খাবার হোটেলসহ হকারদের দখলে। যাত্রীছাউনিগুলো দুই সিটি করপোরেশন ছাড়া বিআরটিসিরও কিছু আছে। ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন অনেক বাসস্ট্যান্ড হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁরা আধুনিকায়নের কাজ শুরু করবেন। ফার্মগেটে হলিক্রস স্কুলের সামনের ছাউনিতে বসার কোনো জায়গা নেই। এখানেও হকারদের দৌরাত্ম্য। মো. আমিন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এই সবের ব্যবহারই মানুষ বোঝে না। একটু জায়গা পাইলেই দখলে নিয়া নেয়।’ কারওয়ান বাজারের সামনের ছাউনিটি ভবঘুরেদের দখলেই থাকে। গতকাল দেখা যায়, দুজন সেখানে ঘুমাচ্ছেন। মিরপুর, কল্যাণপুর, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানের যাত্রী ছাউনিও দখলকৃত।

No comments

Powered by Blogger.