কালো রাস্তা রক্তে লাল

রাকের ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া ভটভটি মহাসড়কের ওপর পড়ে আছে। পিচের কালো মহাসড়ক রক্তে লাল। মহাসড়কের ওপর ও পাশে ছড়িয়ে আছে শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ। আরও পড়ে আছে গামছায় বাঁধা ও টিফিন ক্যারিয়ারের থাকা খাবারদাবার। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর বটতলায় চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়কে আজ রোববার সকালের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার স্থলে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। জয়রামপুর বটতলায় সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বালুভর্তি ট্রাক ও যাত্রীবাহী ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন নয়জন। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত হন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মারা যান তিনজন। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান একজন। চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজন মারা যান। নিহত ব্যক্তিরা হলেন দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের আব্দার হোসেন (৪৮), বিল্লাল হোসেন (৪০), আবু বকর সিদ্দিক (৪৩), ইজ্জত আলী (৬০), নজির আহমেদ (৩০), শান্ত আহমেদ (২২), হাফিজুর রহমান (৪০), শফিকুল ইসলাম (৩৫), বিল্লাল মোল্লা (৩৫), রফিকুল ইসলাম (৩৫), জজ হোসেন (২৮), লাল মোহাম্মদ (৩৫) ও শাহীন হোসেন (৩৫)। আহত ব্যক্তিরা হলেন একই গ্রামের কালু মিয়া (৩০), আলতাফ হোসেন (৫০), জিয়াউর রহমান (৪০), সোহরাব হোসেন (৪৫), মজিবর রহমান (২২), শরীফ হোসেন (৪২), আতিকুল ইসলাম (২৫), শফিকুল ইসলাম (২৮) ও নুর ইসলাম (৪৫)। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহত হওয়া ব্যক্তিরা নির্মাণশ্রমিক ছিলেন। তাঁরা ভটভটির আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দামুড়হুদা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনিসহ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের চেষ্টায় ঘণ্টা খানেক পর মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাকের ধাক্কায় ভটভটিটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মহাসড়কের ওপর পড়ে আছে। পিচঢালা মহাসড়কে রক্তের ছাপ। হতাহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। পড়ে আছে গামছায় বাঁধা ও টিফিন ক্যারিয়ারে থাকা খাবার।
আলু ভর্তা ও ডিম ভাজি বেরিয়ে পড়েছে। পড়ে আছে কোদাল, শাবল, মাথাল ও স্যান্ডেল। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জয়রামপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, একদল শ্রমিক নিয়ে একটি ভটভটি দর্শনার দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে যাচ্ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে আসছিল বালুভর্তি একটি ট্রাক। জয়রামপুর স্কুলের কাছে ভটভটিকে সজোরে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। ভটভটিটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে যান। শ্রমিকদের আর্তনাদে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। আশরাফুল বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। দুর্ঘটনায় আহত নুর ইসলাম বলেন, তিনিসহ ২২ জন ভটভটিতে গাদাগাদি করে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্বজনেরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। আসেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস ও জেলার সিভিল সার্জন রওশন আরা। নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফন এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের অনুমতি দেয় প্রশাসন। দামুড়হুদা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে আটজন, হাসপাতালে চারজন, পথে একজনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.