বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৬

সিলেটের জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দলের অভিযানের মধ্যেই শনিবার রাতে ভবনের কাছে দুটি বোমা বিস্ফোরণে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ সময় র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসিসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালককে রাতেই হেলিকপ্টারে ঢাকায় সিএমএইচে পাঠানো হয়। আহতদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশংকাজনক। প্রথম বিস্ফোরণটি ছিল আত্মঘাতী। পরে পুলিশ ‘ক্রাইম সিন’ করতে গিয়ে বস্তাসদৃশ একটি বস্তু পরীক্ষা করার সময় দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে টানা ৩০ ঘণ্টা বাড়িটি ঘিরে রাখার পর শনিবার সকাল ৯টায় অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। শুরুতে নারী-শিশুসহ আটকে পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে ভবন থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হতেই মুহুর্মুহু গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিকালে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানায় সেনাবাহিনী। কিন্তু এতে সাড়া দেয়নি তারা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। শনিবার সন্ধ্যার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। এ সময় ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, আতিয়া মহলের প্রতিটি ফ্ল্যাটের দরজার সামনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ফেলে রেখেছিল জঙ্গিরা।
ভোর ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত ছিল। তখনও জঙ্গি আস্তানা থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময় বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের না হতে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তাই অভিযান নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হননি। গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন সূত্র থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনার বর্ণনা পেয়েছেন। আতিয়া মহলের এক বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে সভা-সমাবেশসহ জোটবদ্ধ হয়ে চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ বিষয়ে রাত দেড়টায় এসএমপির কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার বরাত দিয়ে ওই এলাকায় মাইকিং করা হয়। সন্ধ্যায় দুই বিস্ফোরণ: সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিং শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট পর ৬টা ৫৫ মিনিটে আতিয়া ভবনের কাছেই পাঠানপাড়ায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় ছাত্রলীগ কর্মী ওয়াহিদুল ইসলাম অপু নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি চৌকি ছিল। নিহত অপু নগরীর ঝালোপাড়া চাঁদনীঘাটের সিরাজুল ইসলাম আওলাদের ছেলে। তিনি মদন মোহন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাত ৮টার দিকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের স্থান ‘ক্রাইম সিন’ করতে যায় পুলিশ। সেখানে পড়ে থাকা বস্তাসদৃশ একটি বস্তু পরীক্ষা করার সময় দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় এসবির ইন্সপেক্টর চৌধুরী মো. আবু কয়সর নিহত হন। বিস্ফোরণের ঘটনায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলায়। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া না গেলেও তিনি জিন্দাবাজার জল্লারপাড়ের একটি ভিডিও দোকানের ক্যামেরাম্যান বলে জানা গেছে।
শহিদুল ও ওই ক্যামেরাম্যান একটি অনুষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে করে ফেরার পথে বিস্ফোরণে আহত হন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডিবি পুলিশৈর ইন্সপেক্টর মোমিনুল ইসলাম ও কলেজ ছাত্র জান্নাতুল ফাহিম মারা যান। ফাহিম দক্ষিণ সুরমার কুচাই এলাকার হাজী ইসরাব আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। ফাহিমের বাবা কুচাই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং প্যানেল চেয়ারম্যান। এদিকে দু’দফা বিস্ফোরণে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি শাহ হারুনুর রশীদসহ কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে রাত পৌনে ১২টায় হেলিকপ্টারে ঢাকায় সিএমএইচে পাঠানো হয়। সেখানে রাত দেড়টায় তার শরীরে অস্ত্রোপচার চলছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবুল কালাম আজাদের অবস্থা এখনও আশংকামুক্ত নয়। তার বক্তিগত কর্মকর্তা হাসান যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অন্য আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ফারুক, সিরাজ, আলম, বক্কর, আবদুর রহিম, জুয়েল, রুবেল, রনি, সৈয়দ আলী, সুলেমান, মোস্তাক, কানু দাস, আজমল আলী ও সেলিম। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিন বিস্ফোরণেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে দুটি মোটরসাইকেল পড়ে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুটি মোটরসাইকেলে হামলাকারীরা এসে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এমএজি ওসমানী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুবল জ্যোতি চাকমা জানান, আহত ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ক্লিনিক্যালি ডেথ।
প্রতিটি ফ্ল্যাটের সামনে বিস্ফোরক : শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় অপারেশন টোয়াইলাইট সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান বলেন, আতিয়া মহলের প্রতিটি ফ্ল্যাটের দরজার সামনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ফেলে রেখেছিল জঙ্গিরা। এতে ফ্ল্যাটে থাকা ভাড়াটিয়ারা জঙ্গিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যরা বাসায় অবরুদ্ধ ৭৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করেছেন। তিনি আরও বলেন, ভবনের ৩০টি ফ্ল্যাটে ১৫০টির মতো কক্ষ রয়েছে। সিঁড়িঘরে বোমা পুঁতে প্রতিবন্ধকতা করে রাখা হয়েছিল। ফলে ভবনে ঢোকা সম্ভব হচ্ছিল না। বিস্ফোরকগুলো অপসারণ করতে গিয়ে তাদের উদ্ধারে কিছুটা সময় লেগেছে। ভেতরে অনেক বেশি অস্ত্র ছিল। ১৭ পদাতিক ডিভিশন শনিবার সকাল ৯টার দিকে অপারেশন শুরু করে। অপারেশনের প্রধান নির্দেশনা ছিল জিম্মিদের নিরাপদে উদ্ধার করা। তাই সতর্কতা অবলম্বন করে অপারেশন চলছে। ১০-১২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী বিস্ফোরক ভেতরে ছিল। অপারেশনে পুলিশ, র্যাব, সোয়াত, ফায়ার সার্ভিস সহযোগিতা করছে। অপারেশন চলমান রয়েছে।
সকাল ৯টায় শুরু অপারেশন টোয়াইলাইট : সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলের নিচ তলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পাঁচ তলা বাড়িটি ঘেরাও করে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার দিনভর বারবার মাইকে আহ্বান জানিয়েও ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি পুলিশ। উল্টো ভেতর থেকে গ্রেনেড ও গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। অভিযানে অংশ নিতে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতের একটি দল বিকালে ঘটনাস্থলে আসে। এছাড়া সন্ধ্যার পর জালালাবাদ থেকে দুটি গাড়িতে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। এরপর অভিযানের কৌশল ঠিক করতে রাতভর দফায় দফায় বৈঠকে বসে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর আরেকটি দল সেখানে আসার পর অভিযানের নেতৃত্বে হাত বদল হয়। সেনাবাহিনী এ অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। এর আগে ঘটনাস্থলে কাজ করে আসা সোয়াত এই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’। চূড়ান্ত অভিযান শুরুর আধা ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনী এই অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ ও সোয়াত শুধু সহায়তা করছে। টানা ৩০ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর সকাল ৯টার দিকে প্যারা কমান্ডো দলের নেতৃত্বে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয়। এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন। গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় চালানো অভিযানেও অংশ নিয়েছিল সিলেটের জালালাবাদ থেকে যাওয়া সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপস্থিত সংবাদকর্মীসহ সবাইকে এক কিলোমিটার দূরে সরে যেতে বলা হয়। শুরুতে ভবনে অবরুদ্ধ থাকা লোকজনকে উদ্ধার করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৭৮ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। দুপুর ২টা থেকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে জঙ্গিরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। জবাবে ব্যাপক গুলি ছোড়ে প্যারা কমান্ডো বাহিনী। বিকাল ৩টার দিকে জঙ্গিদের গ্রেনেড বিস্ফোরণ থেমে গেলে মাইকে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় সেনাবাহিনী। কিন্তু তারা এতে সাড়া দেয়নি। এরপর সারা দিনই থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। বিকট শব্দ শুনে বাইরে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা তা গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ। অভিযানের সময় ঘটনাস্থলের অদূরে অবস্থান করছিল সোয়াত, বোমা নিষ্ক্রিয় টিম, র্যাব, পুলিশ, ডিবি, সিটি এসবি, পিবিআইসহ আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। স্ট্যান্ডবাই ছিল সেনাবাহিনীর চারটি বুলেটপ্রুফ আর্মার ভেহিক্যাল, পুলিশের সাঁজোয়া যান, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। টানটান উত্তেজনার মধ্যে একটি দিন ও একটি রাত পার করে চূড়ান্ত অভিযান শুরুর আগে শনিবার সকালে ওই ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর আগে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
জঙ্গি আস্তানার সন্ধান : পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, সিলেটে জঙ্গি আস্তানা থাকার তথ্য পাওয়ার পর তাদের সদস্যরা সিলেট পুলিশকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে শিববাড়ির ওই ভবনের সন্ধান পান তারা। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে পুলিশ সদস্যরা ওই ভবন ঘিরে ফেলে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। ভোরের দিকে নিচ তলার এক বাসার জানালা খুলে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ছোড়া হয় গ্রেনেড। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায় এবং পুরো এলাকা ঘিরে রাখা হয়।
আতিয়া ভবন : শিববাড়ি পাঠানপাড়ায় ব্যবসায়ী উস্তার আলীর পাঁচ তলা ও চার তলা পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি আতিয়া ভবন-১ অপরটি আতিয়া ভবন-২। এর মধ্যে পাঁচ তলা ভবনের নিচ তলায় জঙ্গিরা রয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। বাড়ির মালিক উস্তার আলী জানান, দুই মাস আগে কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তার পাঁচ তলা বাড়ির নিচ তলার চার নম্বর বাসাটি ভাড়া নেন। সে সময় কাউছার নিজেকে একটি বেসরকারি কোম্পানির অডিট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয়। ব্যবসায়ী উস্তার আরও বলেন, সব নিয়ম মেনেই তাদের বাসা ভাড়া দেয়া হয়েছিল। দু’জনের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিও রাখা হয়েছে। তারা নিয়মিত ভাড়াও দিয়ে আসছিল। তবে পুলিশের ধারণা, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা কাউছার নাম নিয়ে ওই বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী মিলে ‘জঙ্গি পরিবার’ গড়ে তুলতে দেখা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিয়ের মাধ্যমে আত্মীয়তা করে ছোট ছোট ইউনিট গড়ে তোলার কৌশল নিয়েছে জঙ্গিরা।
অভিযান দেখতে গিয়ে আহত : আতিয়া মহলে অভিযান দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন স্টুডিও ব্যবসায়ী শিবুল মালাকার। তিনি শিববাড়ির পাশের পৈতপাড়ার বসন্ত মালাকারের ছেলে। তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহত শিবুল ঘটনাস্থলের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অভিযান : শনিবার রাতে শুরু হওয়া প্রবল ঝড়-বৃষ্টি থেমে থেমে চলতে থাকে। সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি একটু কম ছিল। এরই মধ্যে ৯টার দিকে শুরু হয় প্যারা কমান্ডো বাহিনীর অপারেশন টোয়াইলাইট। পরে সকাল ১০টার দিকে ফের ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এমন প্রতিকূল আবহাওয়াতেও অব্যাহত থাকে প্যারা কমান্ডো বাহিনীর অভিযান।
আতিয়া মহলের পাশের ভবন ঘেরাও : সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল শনিবার সকালে অভিযান শুরু করলে আতিয়া মহলের বিপরীতে থাকা সাদা রঙের বহুতল ভবন থেকে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে দু’রাউন্ড গুলি হয়। এরপর ওই ভবনটি ঘিরে রাখে সেনাবাহিনী। সরিয়ে নেয়া হয় চার তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের বাসিন্দাদের। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা কোনো বক্তব্য দেননি।
সড়ক বন্ধ, জনদুর্ভোগ : সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের একটি গলি রাস্তার মোড়েই আতিয়া মহলের অবস্থান। সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনী অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর আগে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ওই রুটের যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন। তবে হেঁটে পথচারী ও সাধারণের চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক ছিল।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি সুনামগঞ্জে : সুনামগঞ্জ  প্রতিনিধি জানান, শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গির ছোড়া গ্রেনেড হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কায়সার দিপুর বাড়ি সুনামগঞ্জে। তিনি শহরের জামাইপাড়ার মৃত আছদ্দর আলী চৌধুরীর ছেলে। সাত ভাই এক বোনের মধ্যে দিপু তৃতীয়। দিপু সিলেট নগর পুলিশে পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন। নিহত দিপুর ছোট ভাই চৌধুরী বাবলু খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। দিপুর মৃত্যুর খবরে তার পরিবারে শোকের মাতম চলছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ছোট ভাই চৌধুরী বাবলু সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন।  ছোট ভাই বাবলু ছাড়া পরিবারের বাকিরা সুনামগঞ্জের বাইরে থাকেন। দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে পুলিশের পরিদর্শক দিপুর কোনো ছেলে সন্তান ছিল না। ঘটনার সময় তার স্ত্রী লোপা সিলেটে অবস্থান করছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.