ভরাডুবি ঠেকানো গেল না

দেড় বছর ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে আসছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁর প্রথম কাজই হবে ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিমা আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন। ঠিক ওবামাকেয়ার স্বাক্ষরিত হওয়ার দিন ২৩ মার্চ কংগ্রেসে কাজটা করতে গিয়ে বিরাট ধাক্কা খেলেন তিনি। রিপাবলিকানদের নিজেদের বিরোধিতাই এর কারণ।
প্রতিনিধি পরিষদের যথেষ্টসংখ্যক রিপাবলিকান সদস্য প্রস্তাবিত নতুন আইনের পক্ষে না থাকায় স্পিকার পল রায়ান শুক্রবার সে খসড়া আইন ভোটে দেওয়ার বদলে তা প্রত্যাহার করে নেন। এখন হোয়াইট হাউস ও রিপাবলিকান নেতাদের মধ্যে দোষী খোঁজার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি স্পিকার রায়ানের মস্তিষ্ক-প্রসূত। তাঁর খসড়া প্রস্তাব কোনো পক্ষকেই খুশি করতে পারেনি। ট্রাম্প ও রায়ান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নতুন আইন আগের চেয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল হবে এবং অধিক মানুষকে বিমার অধীনে আনবে। দলের অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী সদস্যদের ভোট পাওয়ার জন্য এই আইনে ওবামাকেয়ারের জনপ্রিয় বেশ কিছু উপাদান বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে ছিল আগে থেকে অসুস্থ হলেও কাউকে বিমা করতে অস্বীকার না করা এবং ২৬ বছর পর্যন্ত সন্তানদের পিতা-মাতার বিমার অধীনে রাখার নিশ্চয়তা। রক্ষণশীলদের খুশি করতে বাতিল করা হয় প্রত্যেকের ওপর বিমা গ্রহণের যে বাধ্যবাধকতা ছিল তা। সরকারি ভর্তুকিও হ্রাস করা হয়। পাশাপাশি অধিক সচ্ছল নাগরিকদের জন্য বিপুল কর রেয়াতির প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ফলে মাথাপিছু বিমার ব্যয়ভার বেড়ে যায় এবং বিপুলসংখ্যক স্বল্পবিত্ত নাগরিকের বিমাব্যবস্থার বাইরে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই প্রস্তাবিত বিমা আইন দ্রুত সমর্থন হারায়। কংগ্রেসের দল নিরপেক্ষ বাজেট অফিসের হিসাব অনুসারে, ওবামাকেয়ারের ফলে যেখানে ২ কোটি অতিরিক্ত মার্কিন বিমা সংগ্রহে সক্ষম হয়, সেখানে রায়ান-প্রস্তাবিত খসড়া আইনে ২ কোটি ৬০ লাখ নাগরিকের বিমা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে দেশের মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ প্রস্তাবিত বিমা আইনের প্রতি তাঁদের সমর্থন রয়েছে বলে জানান। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের ২৪৭টি আসন থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ভোট সংগ্রহে তাঁরা ব্যর্থ হন। ভোটাভুটিতে পরাজিত হওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে স্পিকার রায়ান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদন নিয়ে খসড়া আইনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই ব্যর্থতার বোঝা শুধু একা ট্রাম্প নন, স্পিকার পল রায়ানকেও বইতে হবে। ট্রাম্প আশা করেছিলেন, স্বাস্থ্যবিমা আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস হলে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর লোকজনের যোগাযোগের অভিযোগ, আড়ি পাতার অভিযোগের প্রমাণ না থাকা নিয়ে সমালোচনার মোড় ঘুরে যাবে।
তা-ও হলো না। ট্রাম্প গত চার দিন অনাগ্রহী রিপাবলিকানদের হুমকি বা প্রলোভন দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে দলে টানার নানা চেষ্টা করেন। তারপরও প্রায় ৪৫ জন রিপাবলিকান তাঁদের অবস্থান বদলাতে অস্বীকার করেন। অনেক মধ্যপন্থী রিপাবলিকানও গররাজি ছিলেন, তাঁরা এই আইনের কঠোর ধারাগুলো মেনে নিতে পারছিলেন না। ট্রাম্প বলেছেন, এই আইন পাস না হওয়ার কোনো দায়দায়িত্ব তাঁর নেই, তাঁর পক্ষে যতটা করা সম্ভব তিনি করেছেন। এমন হাস্যকর কথাও বলেছেন যে এই ব্যর্থতার সব দায়দায়িত্ব ডেমোক্র্যাটদের, কারণ তাঁদের একজনও এই আইনের পক্ষে ছিলেন না। অধিকাংশ ভাষ্যকারই একমত, এর ফলে প্রমাণিত হলো এত দিন যাঁরা ওবামা প্রশাসনের বিরোধিতায় আট বছর কাটিয়েছেন, দেশ শাসনের যোগ্যতা তাঁদের নেই। এই ব্যর্থতার জন্য খাঁড়ার ঘাটি পড়বে স্পিকার রায়ানের ঘাড়েই। তিনি প্রেসিডেন্টকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, আইনটি অনুমোদনের জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন প্রতিনিধি পরিষদে রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.