মধুচন্দ্রিমার পরপরই বিয়ে বিচ্ছেদ?

স্বামী ও স্ত্রীর পরষ্পরকে বোঝার জন্য
সময় দেওয়া উচিত। মডেল: রাজ ও
নাফিজা। ছবি কবির হোসেন
বিয়ের এক মাসের মধ্যেই ভারতের শহুরে দম্পতিদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে। মধুচন্দ্রিমা থেকে ফেরার পর এই হার দিন দিন বেড়েই চলছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত মাসে এক দম্পতি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মধুচন্দ্রিমায় যান। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গ পছন্দ করতে পারেননি স্বামী। অতঃপর ১০ দিনের ভ্রমণ কমিয়ে ৩ দিন শেষে দেশে ফিরে আসেন। স্ত্রীর সঙ্গে কেন অন্তরঙ্গ হতে পারেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই স্বামী বলেন, আগে তাঁর কোনো প্রেমিকা না থাকলেও স্ত্রীর সঙ্গ তিনি উপভোগ করতে পারেননি। মধুচন্দ্রিমা থেকে ফেরার পর তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা আর একসঙ্গে থাকবেন না।
ভারতের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিবাহ পরামর্শক সঞ্জয় মুখার্জি বলেন, গত তিন বছর ধরে মধুচন্দ্রিমা থেকে ফেরার পরপরই বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি আবেগ ও শারীরিক অন্তরঙ্গতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন একজন সঙ্গীর কাছে শারীরিক সম্পর্ক একেবারে যান্ত্রিক হয়ে যায় এবং একে অপরের সঙ্গে এই সম্পর্ক উপভোগ করেন না, তখনই এই বিপত্তি ঘটে।
এটা সত্য যে পারিবারিকভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে একজন আরেকজনের পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপারে সচেতন থাকে না। তবে এমনটা প্রেম করে বিয়ের পরও হতে পারে। আইনজীবী মৃণালিনী দেশমুখ বলেন, গত দুই মাসে তিনি বেশ কয়েকজন দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ দেখেছেন। একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে না নিতে পারায় এসব বিয়ে বিচ্ছেদের বেশির ভাগগুলো ঘটেছে। এ ছাড়া বিয়ের আগের ও পরের আচরণগত পরিবর্তনও এই বিচ্ছেদের একটি বড় কারণ।
গৌরী শেঘাল (ছদ্মনাম) নামের এক নারী সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আইনজীবীর কাছে এসেছিলেন। কেন বিয়ে বিচ্ছেদ চান—জানতে চাইলে গৌরী বলেন, ‘আমরা তিন বছর প্রেম করেছি। কিন্তু বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় গিয়েই আমার স্বামীর আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাই, যা আমাকে প্রতিনিয়ত অসুখী করে তোলে। তাই আমি বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিই।’
হরিশ শেঠি নামের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, এক ছাদের নিচে থাকা আর একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যাওয়া একেবারেই ভিন্ন ব্যাপার। বিয়ের পরই একজন মানুষকে ভালোভাবে চেনা যায়। কেউ যদি তার সঙ্গীর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায় ও অশ্রদ্ধা দেখায়, তখনই দাম্পত্য জীবনে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।
দুজনের মধ্যে স্বভাবগত পার্থক্য ছাড়াও, আগে প্রেমের সম্পর্ক, উভয়ের মধ্যে সমঝোতার অভাব, সত্য লুকানো, বিয়ের পর ভয় কিংবা অনীহার কারণে শারীরিক সম্পর্ক উপভোগ্য না হওয়া বিবাহ বিচ্ছেদের বড় কারণ। এ ছাড়া দাম্পত্য জীবনে পরিবারের অযাচিত হস্তক্ষেপও সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত কাজের চাপের ফলে একজন আরেকজনের প্রতি সহনশীলতা হারিয়ে ফেলে, কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
দম্পতিদের জন্য পরামর্শ
পারিবারিকভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে, একে অপরকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইনজীবী মৃণালিনী দেশমুখের মতে, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে বোঝার জন্য সময় দেওয়া উচিত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হরিশ শেঠি বলেন, দুজন দুজনকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। বিয়ে একটা কাজ। আর এই কাজে একজনের একঘেয়েমি আসতেই পারে। এটা অনেকটা গাড়ির মতো। এটিকে চালিয়ে নিতে নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.