‘সন্ত্রাসীদের বর্বরতায় ভীত হওয়া চলবে না’

গত শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণের উচ্চ পর্যায়ের এক অধিবেশনে চরমপন্থা দমনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সুনির্দিষ্ট কর্ম-কৌশল সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্তকালে মহাসচিব বান কি মুন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান এবং মানবতার শত্রু হিসেবে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ঠাণ্ডা মাথায় এবং কমনসেন্স দিয়ে উগ্রপন্থিদের সহিংসতার জবাব দানের আহবান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বিশ্বব্যাপী চরমপন্থা তথা সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় গৃহীত এযাবৎকালের বোধহীন পলিসি প্রকারান্তরে দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে বিস্তৃত করেছে। মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা বিরাট জনগোষ্ঠীকে শত্রুর শিবিরে ঠেলে দিয়েছে এবং প্রকৃত অর্থে সন্ত্রাসীরাই লাভবান হয়েছে। এ সমাবেশে বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সবধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। স্থানীয়, আঞ্চলিক অথবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উগ্রবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নীতি তুলে ধরেন। মহিলা সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় ও স্থানীয় সরকারের নেতৃবৃন্দ, তৃণমূল সদস্য এবং মিডিয়ার সামগ্রিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহিংসতা রোধে বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহও উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭০তম সাধারণ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত ‘কাউন্টারিং ভাইয়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ শীর্ষক অধিবেশনে যোগ দিয়ে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের পুনর্ব্যক্ত করেন বলেও এ সমাবেশকে অবহিত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানকে উপস্থিত অধিকাংশ রাষ্ট্রই সাধুবাদ জানিয়েছে বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে।
জাতিসংঘ মহাসচিব এ সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেছেন, এটা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো শুধু সহিংসতাকে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে দিতে চায় না, ওরা আরো বেশি নির্মম প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করে। এবং আমরা নির্বোধের মতো সে ধরনের কর্মই করে চলেছি সন্ত্রাসীদের বর্বরতার বিরুদ্ধে। আমাদেরকে ওদের বর্বরতায় ভীত হওয়া চলবে না। এবং আরো বেশি নিষ্ঠুরতা চালানো যাবে না, যা থেকে সন্ত্রাসীরাই লাভবান হতে পারে’-মন্তব্য মুনের। মহাসচিব বলেন,  দেশের জনসাধারণের মধ্যে কোন কারণে ক্ষোভ সৃষ্টি হলে তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং মানবাধিকার এবং প্রচলিত রীতি যাতে ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কোনভাবেই যাতে মানুষ আরো বিতশ্রদ্ধ না হয় সে ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকা জরুরী রাষ্ট্র পরিচালকদের। অন্যথায় শত্রুরা তথা চরমপন্থিরাই লাভবান হবে।
মহাসচিবের ২২ পৃষ্টার কর্ম-কৌশলের মধ্যে বলা হয়েছে যে, শতাধিক দেশ থেকে চরমপন্থিরা ৩০ হাজার ‘বিদেশী সন্ত্রাসী যোদ্ধা’ নিয়োগ করেছে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং ইয়েমেন সফরের জন্যে।’ মহাসচিব বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা শুধু একটি ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, একটি জাতির মধ্যেও নয়, কিংবা বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যেও ওরা সীমাবদ্ধ নয়। এবং সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার যারা হচ্ছে তার সিংগভাগই মুসলমান।’
সন্ত্রাসবাদ দমনে এযাবতকালের গৃহিত পদক্ষেপের সমালোচনা করে মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, অদূরদর্শিতা, ব্যর্থ নেতৃত্ব, আনাড়ি প্রস্তাব, এককভাবে শুধুমাত্র নিরাপত্তার ব্যাপারকে প্রাধান্য দিয়ে মানবাধিকারকে পাত্তা না দেয়ায় পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.