ক্যাফে মালিক থেকে আইএস নেতা

সাত বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার মফস্বল শহর সোলোর নির্ঝঞ্ঝাট সাধাসিধে মানুষ ছিলেন বাহরুন নঈম। ছোট শহরের এক কোণে একটি ইন্টারনেট ক্যাফে চালাতেন নঈম। শান্তশিষ্ট ধর্মানুরাগী হিসেবে যুবক নঈমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন প্রতিবেশী-পরিজনরা। অথচ সেই নঈমই নাকি জাকার্তায় আইএস হামলার নেপথ্য নায়ক। ইন্দোনেশিয়ায় আইএসের শীর্ষ নেতা- চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো এত বড় খবর সোলোবাসী দ্বিতীয়টি আর শোনেনি। অন্যদিকে বিবিসি লিখেছে, এক সময় কম্পিউটার টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন নঈম। ধারণা করা হয়, তার বাড়ি সেন্ট্রাল জাভার পেকালংগানে। বৃহস্পতিবার পুলিশ নঈমকে চিহ্নিত করেছে জাকার্তা হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে। জাকার্তার কেন্দ্রস্থলে বোমা ফাটিয়ে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী এ হামলায় নিহত হয়েছেন পাঁচ হামলাকারীসহ সাতজন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি দল ইসলামিক স্টেট এর দায় স্বীকার করেছে। পুলিশ বলছে, এ হামলা পরিকল্পনার পেছনে মূল ব্যক্তি হলেন সেই বাহরুন নঈম। তিনি এখন আছেন সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকায়; সেখান থেকেই তিনি হামলার ছক সাজিয়েছেন। শুক্রবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে অবৈধ অস্ত্রসহ ধরা পড়লে তিন বছরের জেল হয় নঈমের।
সাজা ভোগের পর ইন্দোনেশিয়ার সোলো ও কেন্দ্রীয় জাভা অঞ্চলের জঙ্গি নেটওয়ার্কের মূল সংযোগকারী হয়ে ওঠেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া গত বছরখানেক ধরেই জঙ্গি হামলার হুমকি পেয়ে আসছিল। খিলাফত কায়েমের নামে ব্যাপক হত্যা-সন্ত্রাস চালিয়ে আসা আইএস ইন্দোনেশিয়াকেই তাদের এশিয়ায় অবতরণের প্রথম বন্দর বানাতে চায়। জাকার্তার পুলিশপ্রধান টিটো কার্নাভিয়ান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, নঈম বেশ কিছুদিন ধরেই হামলার পরিকল্পনা করছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইএসের নেতা হওয়ার ‘বাসনা’ রয়েছে তার। নভেম্বরে প্যারিসে একসঙ্গে কয়েকটি স্থানে সমন্বিত হামলার পর ‘জঙ্গি বুদ্ধিজীবী’ বাহরুন নঈম একটি ব্লগ লেখেন। সেখানে তিনি অনুসারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন- কীভাবে ইন্দোনেশিয়ার নিরক্ষীয় জঙ্গলের গেরিলাযুদ্ধ থেকে ‘জিহাদকে’ সহজেই শহরে নিয়ে যাওয়া যায়। ওই ব্লগে তার অনুসারীদের ওই ঘটনা থেকে শিখতে বলেন। ‘প্যারিস জিহাদের’ পরিকল্পনা, নিশানা, টাইমিং, সমন্বয়, নিরাপত্তা ও সাহসিকতার দিকগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে বলেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, প্যারিস হামলার ধরন অনুসরণ করে জাকার্তার ঘটনা ঘটানো হলেও হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে হামলাকারীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে। নঈমের ঘনিষ্ঠ একজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ নভেম্বর টেলিগ্রাম ম্যাসেঞ্জারে ইন্দোনেশিয়ার এ জঙ্গি নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। ওই কথোপকথনে নঈম বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার জন্য যথেষ্ট আইএস সমর্থক রয়েছে। তারা কেবল অপেক্ষা করছে ‘সঠিক’ সুযোগের জন্য। বৃহস্পতিবার জাকার্তায় হামলার ঘটনার পর আবারও নঈমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে রয়টার্স। তবে এবার আর তাকে পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.