চিকিৎসার ব্যয়ে বছরে সর্বস্বান্ত ৬৪ লাখ মানুষ

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম মুজাহেরুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ চিকিৎসার ব্যয় মিটাতে পারছে না। সর্বস্বান্ত হয়েন পড়ছেন। শুধু তাই নয় ক্যান্সার ও কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসার-ব্যয় মেটাতে পারছে না। সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে দুইদিন ব্যাপী স্বাস্থ্য বিষয়ক  বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  তিনি এই তথ্য পরিবেশন করেন। সম্মেলনের প্রথম দিন বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি, শিশুস্বাস্থ্য, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও ২৫টি গবেষণা প্রতিবেদন ও নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন,অধ্যাপক ডা. সর্দার মাহমুদ হোসেন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ডা. রজত দাশগুপ্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ডা. সাজিয়া হক, অধ্যাপক ডা. শারমিন ইয়াসমিন     প্রমুখ। সম্মেলনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অধ্যাপক এম মুজাহেরুল হক বলেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট স্বাস্থ্যসেবাদানের প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও কর্মী থাকলেও নাগরিকরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। সম্মেলনের অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যতটুকু স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা রয়েছে,তা জনগণকে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসা গ্রহণের জন্যও বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা যথেষ্ট নেই। ফলে রোগ প্রতিরোধের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদকগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ অন্যের ব্যবহৃত সূঁচের সাহায্যে মাদক গ্রহণ করেন। ফলে তারা এইচআইভি/এইডস ও হেপাটাইটিস বি-এর মতো সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ মাত্রার ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। হেপাটাইটিস বি বিষয়ে মানুষের জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও চর্চা মূল্যায়নের লক্ষ্যে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ঢাকার একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে দেড়শ রোগীর ওপর চলতি বছর এ গবেষণা চালায়। ডা. সাজিয়া হক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ বহুগামী যৌনাচারে অভ্যস্ত যাদের মধ্যে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ শারীরিক সম্পর্কের সময় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় বেরিয়ে আসছে যারা অন্যের রক্ত গ্রহণ করেছেন, তাদের ১ দশমিক ৩ শতাংশ পরীক্ষাহীন রক্ত নিয়েছেন। ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরপ্রদানকারী জানিয়েছেন, তারা কখনো হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা নেয় না। তৃতীয় পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন দিবস উপলক্ষে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং ফেইথ বাংলাদেশ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় উল্লেখ করেন, ডায়ারিয়া, জ্বর ও নিউমোনিয়া এখন শিশু মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণ। চলতি বছরের জুনে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ২০৮টি ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর ওপর ওই গবেষণা চালানো হয়। ওইসব শিশুর ২৬ শতাংশ ডায়রিয়া, ২১ শতাংশ জ্বর, ১৬ শতাংশ নিউমোনিয়া, ১৩ শতাংশ সাধারণ ঠাণ্ডা ও ১১ শতাংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল। অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, ধূমপান, হতাশা, চাকরি-সম্পর্কিত মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সঙ্গে  সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ সন্তান জন্মদানে অক্ষমতা-সম্পর্কিত ১৬০টি ঘটনা নিয়ে ওই গবেষণা চালায় এবং সংশ্লিষ্ট ৪৫ শতাংশ উত্তরকারী জানান তারা ধূমপায়ী। এছাড়া ৩৮ দশকিম ৫ শতাংশ উত্তরপ্রদানকারী তাদের মধ্যে হতাশা, ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ চাকরি নিয়ে মানসিক চাপ, ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ ডায়াবেটিস এবং ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছ।

No comments

Powered by Blogger.