কেয়ামতের ঘণ্টা বাজতে তিন মিনিট বাকি!

কেয়ামতের ঘণ্টা বাজতে আর মাত্র ৩ মিনিট বাকি। দৈনন্দিন সময় গণনার কোনো ঘড়ির সময় নয় এটি। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সময়সীমা পর্যালোচনায় নির্মিত ‘ডুমসডে ক্লক’ (কেয়ামতের ঘড়ি) অনুযায়ী সময় রাত ১১টা ৫৭ মিনিট, রাত ১২টা বাজতে ৩ মিনিট বাকি। তার মানে পৃথিবী ধ্বংস হতে আর ৩ মিনিট বাকি। কিন্তু জলবায়ু রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এজন্য একটি টেকসই জলবায়ু চুক্তির দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব।
১৯৪৫ সালে হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে বোমা ফেলার পর শিকাগোর কিছু পারমাণবিক বিজ্ঞানী ‘বুলেটিন অব দ্য এটোমিক সাইন্টিস্ট’ নামে একটি নিউজলেটার বের করেন- যার মাধ্যমে বিশ্ব পরিস্থিতির প্রতীকী সময়সীমা দেখানো হয়। এ সময়সীমা বিশ্বের ভারসাম্যতার ওপর নির্ভর করে কমবে ও বাড়বে বলে উপস্থাপন করেন বুলেটিনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেইম্যান গোল্ডস্মিথ। এর পরেই ১৯৪৭ সালে ঘড়ির আঙ্গিকে বৈশ্বিক দুর্যোগ পরিস্থিতি পরিচালনা করতে প্রতীকী ‘কেয়ামত ঘড়ি’ তৈরি করা হয়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত বুলেটিন অফিসের দেয়ালে ঘড়িটি ঝুলানো রয়েছে। ‘বুলেটিন অব দ্য এটোমিক সাইন্টিস্টসে’র বিজ্ঞান ও নিরাপত্তা বোর্ডের সদস্যরা ঘড়িটি নিয়ন্ত্রণ করেন। ১৮ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী নিয়ে গঠিত ‘গভর্নিং বডি’ ঘড়িটির নিয়ন্ত্রণে ও পরামর্শ প্রদানে সহায়তা করে থাকেন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ঘড়িটিতে দেখানো হয়েছে কেয়ামতের ঘণ্টা বাজতে আর মাত্র ৩ মিনিট বাকি।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমার আধুনিকীকরণকেই দায়ী করেছেন বুলেটিনটির গভর্নিং বডি। বিশ্বের বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন ও পারমাণবিক অস্ত্রাগারের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি হুমকির মুখে বলে মনে করেন বুলেটিনের বোর্ড সদস্যরা। শনিবার সানডে টাইমসের পত্রিকার এক বিবরণীতে এমন তথ্য দিয়েছে তারা। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে একত্রিত বিশ্ব নেতারা। একটি ফলপ্রসূ চুক্তি হওয়ার অপেক্ষায় বিশ্বের বিজ্ঞানীদের একটি দল। যারা ‘কেয়ামত ঘড়ি’র কাঁটা নিয়ন্ত্রণ করেন। কারণ, বিশ্ব থেকে অশুভ শক্তি তাড়িয়ে দিলে ঘড়ির সময়সীমা বৃদ্ধি পাবে। কেয়ামত ঘড়ির সময় বিবর্তন ১৯৪৭ সালে স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে এ পর্যন্ত ২৩ বার কেয়ামত ঘড়িটির কাঁটা ওঠা-নামা করেছে। কেয়ামত ঘড়ির সময় বিবর্তন নিুে দেয়া হল-
১৯৪৭ : কেয়ামত ঘড়িটি স্থাপন করা হয়, ঘড়িতে রাত ১১টা ৫৩ মিনিট।
১৯৪৯ : সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কারণে সময় বাড়ে রাত ১১টা ৫৭ মিনিট।
১৯৬০ : ১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সমতায় এলে, ঘড়ির সময় হয় রাত ১১টা ৫৩ মিনিট।
১৯৬৮ : ভিয়েতনাম যুদ্ধ, সিক্স ডে যুদ্ধ ও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে সময় দাঁড়ায় রাত ১১টা ৫৩ মিনিট।
১৯৭৪ : ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার কারণে সময় দাঁড়ায় রাত ১১টা ৫১ মিনিট।
১৯৮৪ : যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল টেস্টের ফলে সময় হয় রাত ১১টা ৫৭ মিনিট।
১৯৮৮ : পারমাণবিক মিসাইলের ক্ষমতা হ্রাস করলে সময় কমে দাঁড়ায় রাত ১১টা ৫৪ মিনিট।
১৯৯০ : বার্লিন দেয়াল ভেঙ্গে যায় ও স্নায়ু যুদ্ধ প্রায় শেষের সম্ভাবনা দেখা দিলে তখন সময় রাত ১১টা ৫০ মিনিট।
১৯৯৮ : পাক-ভারত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করায় রাত ১১টা ৫১ মিনিট।
২০০২ : যুক্তরাষ্ট্রের এন্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তির অস্বীকারে সময় রাত ১১টা ৫৩ মিনিট।
২০০৭ : দক্ষিণ কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করলে সময় রাত ১১টা ৫৫ মিনিট।
২০১২ : পারমাণবিক অস্ত্রাগার ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে না পারায় সময় রাত ১১টা ৫৫ মিনিট।
২০১৫ : জলবায়ু পরিবর্তন ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকীকরণের ফলে ঘড়ির সময় এখন রাত ১১টা ৫৭ মিনিট।

No comments

Powered by Blogger.