২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনের উৎসাহে ভাটা

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ২৩ জন মন্ত্রী-সাংসদকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাতে ভাটার টান শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত দুজন সাংসদকে সতর্ক করে দিয়ে দায় সেরেছে কমিশন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করে।
কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল সন্ধ্যার পর হবিগঞ্জ-৩ আসনের আবু জাহির ও সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুর রহমানের ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ভবিষ্যতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা থেকে বিরত থাকবেন। অন্যথায় কমিশন আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
গতকাল দুপুর ১২টার মধ্যে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ২৩ জন মন্ত্রী-সাংসদকে সতর্ক করার পৃথক চিঠি নথিবদ্ধ করে সচিবের দপ্তরে পাঠানো হয়। একাধিক কর্মকর্তা জানান, নথিটি সচিবের দপ্তরে যাওয়ার পর কমিশন সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে তালিকা তৈরির পরামর্শ দেন। দিন শেষে নির্বাচন শাখার কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বাকিদের আদৌ সতর্ক করা হবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ আছে। কারণ, আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার। রোববারের আগে কমিশনারদের দপ্তরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তখন মন্ত্রী-সাংসদদের সতর্ক করা অনেকটাই অর্থহীন। কারণ, ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টায় এমনিতেই সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম বাদ যাবে। কারণ কমিশন প্রমাণ পেয়েছে, তাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। তাঁদের মধ্যে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ আরও এক-দুজন থাকতে পারেন। বাকি যাঁরা আছেন, তাঁদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল আছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, সরকারের মন্ত্রী-সাংসদদের কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই তাঁদের সতর্ক করে দিতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে আরও সক্রিয় করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বক্তব্য, মন্ত্রীদের সতর্ক করতে না পেরে কমিশন নিজেদের সম্মান রক্ষায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র: সারা দেশের ২৩৩টি পৌরসভায় অতি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৪টি। নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খসড়া পরিপত্রে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩৪৮টি, রংপুর বিভাগে ১১৮, রাজশাহী বিভাগে ২৪৬, খুলনা বিভাগে ১৯৫, সিলেট বিভাগে ৪৫, বরিশাল বিভাগে ৬৩ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬৯টি কেন্দ্র রয়েছে। ২৩৩টি পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্র ৩ হাজার ৪০৩টি। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের হার ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
জাপার অভিযোগ: গতকাল বিকেলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাৎ শেষে আবু হোসেন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হামলা করছেন। তিনি নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সিইসির কাছে অনুরোধ জানান
কাজেই আমরা নিরপেক্ষ: সিইসি
সিইসি বলেছেন, ‘যেখানে আইন লঙ্ঘন, সেখানেই অ্যাকশন নেব। সবারই যদি কিছু কিছু অসুবিধা হয়, তা হলে বুঝবেন সবার ক্ষেত্রেই অ্যাকশন নিচ্ছি। কাজেই আমরা নিরপেক্ষ।’ গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—জানতে চাইলে কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে সবারই বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে সাংসদদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’ আইন লঙ্ঘনকারী মন্ত্রী-সাংসদের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চাওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোনো চিঠি তাঁরা পাননি।

No comments

Powered by Blogger.