গ্রেনেডের উপকরণ আসছে দেশের বাইরে থেকে by গোলাম মর্তুজা

নিষ্ক্রিয় করার পরে একটি গ্রেনেডের
খোল দেখাচ্ছেন এক কর্মকর্তা। ছবি: প্রথম আলো
পাইপ কেটে ঘরে বসেই জঙ্গিরা তৈরি করছিল হাতে তৈরি গ্রেনেড। মোটা দাগে গ্রেনেডের মূল পাঁচটি অংশ বা উপকরণ। এর তিনটিই এ দেশে পাওয়া যায় না। দেশের বাইরে থেকে এসব উপাদান জঙ্গিরা সংগ্রহ করছে বলে পুলিশের বোমা বিশেষজ্ঞরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর-১ এর এ ব্লকের নয় নম্বর সড়কের একটি ছয়তলা বাড়িতে দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ছয়জনসহ মোট সাতজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ওই বাড়ি থেকে ১৬টি হাতে তৈরি গ্রেনেড ও দুটি ককটেল উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বাড়িটি থেকে প্রচুর হাতে তৈরি গ্রেনেডের উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, পানির ধাতব (জিআই) পাইপের খোল কেটে মূলত গ্রেনেডের খোল বা বডি তৈরি করছিল। এর ভেতরে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে আনুষঙ্গিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ভরে তৈরি হচ্ছিল গ্রেনেড। ওই বাড়িতে যে পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম মজুত করা হয়েছে তা দিয়ে অন্তত দুশোটি গ্রেনেড তৈরি সম্ভব।
কয়েকজন উর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মোটা দাগে গ্রেনেডের পাঁচটি অংশ। এগুলো হলো খোল, বিস্ফোরক, সার্কিট, প্রেশার রিলিজ সুইচ ও পিন। স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত পাইপ কেটে খোল তৈরি হয়। কয়েক ধরনের বিস্ফোরকও খোলা বাজারেও পাওয়া যায়। তবে এদের ব্যবহৃত বিস্ফোরকগুলো দেশের বাইরেও থেকে আনা বলে মনে হচ্ছে। তবে ব্যবহৃত সার্কিট ও প্রেশার রিলিজ সুইচগুলোও এ দেশে পাওয়া যায় না। সুইচ খোলার পিন এখন জঙ্গিরা নিজেরাই বানাচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান। পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলোর পিন স্থানীয়ভাবেই ঝালাই করে তৈরি করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, এর আগে একই রকম গ্রেনেড উদ্ধারের পরে জঙ্গিরা জানিয়েছিল নিজেদের জঙ্গি নেটওয়ার্কে পাশের একটি দেশ থেকে তারা এসব সার্কিট ও প্রেশার রিলিজ সুইচ সংগ্রহ করছেন। আগে বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা গ্রেনেডেও একই ধরনের সার্কিট ও প্রেশার রিলিজ সুইচ ব্যবহার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, গতকাল মিরপুর থেকে উদ্ধার করা প্রতিটি গ্রেনেডে একটি করে নম্বর বসানো ছিল। এসব গ্রেনেড দিয়ে জঙ্গিরা রাজধানী ও এর আশপাশে গির্জায় ও মাজারে হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে সবকিছু জানা যাবে।
এই ঘটনায় আজ রাজধানীর শাহ আলী থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩৬।

No comments

Powered by Blogger.