মির জাফর বংশের তরবারি দিলেন মোদিকে পুতিন

রাশিয়া সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলার নবাব মির জাফরের বংশধরদের ব্যবহৃত তরবারি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এখানে কলকাতাভিত্তিক একটি নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত খবরটি তুলে ধরা হলো।
নরেন্দ্র মোদির দু'দিনের রাশিয়া সফর কূটনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে৷ তবে, নানাবিধ আন্তর্জাতিক চুক্তির অবশ্যম্ভাবী গাম্ভীর্য এবং সুদূরপ্রসারী অভিঘাত ছাপিয়ে ভারতবাসীর মনে যে বিষয়টি দাগ কাটতে বাধ্য তা হলো, মৈত্রী এবং সৌহার্দ্যের চিহ্নস্বরূপ পুতিন মোদিজিকে বাংলার নাজাফি বংশের--- এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা মীর জাফর--- একখানি তরোয়াল উপহার দিলেন৷ ভালোবাসার প্রতীক কী এবং কাহাকে বলে ইত্যাদি সাবেক প্রশ্নের চিরাচরিত উত্তরে বড়সড় বদল যে ঘটেছে তা বলাই বাহুল্য, এবং চিরপরবর্তনশীলতাকে যদি মানব সভ্যতার আবশ্যিক শর্ত হিসেবে মেনে নিতেই হয়, তবে সাধারণ মানুষের কৌম চেতনায় সে বিষয়টি সম্পর্কে কোনও আগাম খবর ছিল না ইত্যাদি অজুহাতও নেহাতই তাত্‍‌পর্যহীন৷
গদি আঁটা রাজনৈতিক পালঙ্কে সমমনস্ক দু'টি প্রাণ নিজেদের মাঝে নাঙ্গা তরোয়াল শুইয়ে যতই প্রেমালাপে মাতুন না কেন, সর্বসাধারণের পক্ষে --- তা তেনারা যতই দুনিয়াজোড়া বাজার বাণিজ্য বিষয়ে জাহেল হন না কেন--- ব্যাপারটি সুখকর নয় মোটেই এবং যুগলের মিলন-কল্পনায় শিরদাঁড়া বেয়ে হিমশীতল ভয়ের স্রোত বই অন্য কোনও অনুভূতি আশা করাও অন্যায়৷
আঠেরো শতকের তরোয়ালটির গায়ে নাকি সেই সময়কার শৈল্পিক রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী অপূর্ব রূপোর কারুকাজ৷ কোপানোর অস্তর হুনুরি লাগিয়ে কারুকার্যখচিত শিল্পবস্ত্ততে রূপান্তরিত করতে হবে এহেন তামাশা সে যুগের জায়েজ ধরন ছিল বটে, তবে আর একটি ব্যাপার এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সে সূত্র ধরেই৷ তরোয়ালের সঙ্গে পুতিন মোদীজিকে মহাত্মা গান্ধীর রোজনামচা লেখা একখানি ডাইরির পাতাও উপহার দিয়েছেন৷ তরোয়ালের গায়ে রূপোর কারুকাজ আঘাতের চোট খানিক প্রশমিত করত কিনা জানার উপায় নেই বটে, তবে তরোয়াল দ্বারা যে শান্তি প্রক্রিয়ার শুরুয়াত হল, তার ওপর ডাইরির পাতা অহিংস মতাদর্শের একখানি প্রলেপ চড়ালো সন্দেহ নেই৷
নাজাফি বংশের সঙ্গে মীর জাফরের প্রত্যক্ষ যোগ নিয়ে নিন্দুকেরা নানা তির্যক ইঙ্গিতে মাতবেন নিশ্চই, তবে সে সবই অদরকারি এবং নিঃসার প্রলাপ মাত্র৷ বরং সন্দেহের বিষয় হিসেবে ওই অহিংস মতাদর্শের অন্তরালে খোলা তরোয়াল আস্ফালনের গুরুত্ব অসীম৷ গান্ধীজির সহিষ্ণু ভারত গড়াই মোদীজির লক্ষ--- কারই বা নয়--- তবে, সে মোকামে পৌঁছতে যদি রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার দরকার পড়ে, তা হলে রুশ প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন নিয়ে হয়তো মোদীজিকে ভাবতে হবে না--- আর এ ক্ষেত্রে শুধু বাংলা, বিহার, ওডিশা নয়, গোটা ভারতের ঝুঁটি ধরে নাড়ানোর তথা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে সুতোয় ঝোলানো পুতুলের দোল খাওয়ার সনদ তো মিলেই গেছে যদি মীর জাফরের প্রসঙ্গ টানা নিন্দুকদের এক ছটাকও পাত্তা দিতে হয়৷
সত্যি বলে কী, ওই ঢাকা চাপা দেওয়া, এই বার্তার আবডালে সেই অর্থ নির্মাণই হয়তো একমাত্র পথ৷ রুশ বিমান সিরিয়ায় বোমা ফেলেছে কারুর তোয়াক্কা না করে, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে কি না সে নিয়ে জোরগলায় এই মুহূর্তে কিছু বলা না গেলেও, বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজ কেউই দিতে পারেননি৷ তলিয়ে দেখলে, ওই সামরিক অভিযানটিও গান্ধীজির রোজনামচার পাতায় আচ্ছাদিত ছিল৷
বিদেশি রাষ্ট্রের অতিথিদের দেশজ শিল্পবস্ত্ত উপহার দেওয়ার ধরন নতুন নয়৷ এ ক্ষেত্রে তরোয়াল এবং চিঠি দুটোই মোদীজির দেশের সামগ্রী৷ তা হলে তরোয়ালটার সঙ্গে, অর্থাত্‍‌, শিল্পকলার নিদর্শনটি আইনমাফিক জায়েজ মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে কি একটি বিশেষ যুগের স্মৃতিও ফেরানো হল? সে সময়ের ন্যায় অন্যায়ের যুক্তি, শাসন শোষণের কাঠামো, রাজধর্ম ও প্রজাপালনের আদলও কি বহন করে ওই তরোয়াল? প্রশ্নটিকে একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না, কারণ মৈত্রী এবং শান্তি বিষয়গুলি বহুমাত্রিক সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ না থাকলেও, প্রান্ত অর্থগুলি যে দ্ব্যর্থবোধক নয় সে নিয়েও সন্দেহ নেই৷
পুতিন এবং মোদীর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক আদানপ্রদানের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা এই দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা থেকেই হতে পারে৷ পুতিন অন্তত গোড়াতেই নিজের অবস্থানটি পরিষ্কার করে রাখলেন৷ তরোয়ালও আছে, অহিংস রাজনীতির বাণীও আছে৷ মোদীজি দুটোই হাত পেতে নিয়েছেন৷ এর পর উনি কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন সেটি তাঁর ব্যাপার৷ ওই তরোয়ালে রক্তের দাগ লাগলে ক্ষতি নেই, সেটাই ভবিতব্য , অমনটাই হয়ে এসেছে বরাবর --- তরোয়াল বলে কি সধর্ম থেকে বিচ্যুত হতে হবে নাকি?
তবে ওই ডায়েরির ছেঁড়া পাতা দিয়ে যাতে সে রক্তের দাগ সাফ না করা হয় সে দিকে আড়চোখে হলেও এ দেশের মানুষ কড়া নজর রাখবেন৷ রাখবেনই৷ বড় মানুষদের আন্তর্জাতিক মস্করায় তাঁদের খুব একটা আপত্তি নেই, ও খেলার বেশিরভাগটাই তাঁদের জীবনের অদৃশ্য একটি অংশ৷ অদ্ভুত শোনাবে ঠিকই, তবে গান্ধীজি ডায়েরির ছেঁড়া পাতা এই জাহেল , আধপেটা খাওয়া , না -খাওয়াদের অনেকেরই জীবনে লেপটে থাকা অংশ৷ তা নিয়ে ঠাট্টা তামাশায় খেপে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷

No comments

Powered by Blogger.