বাংলাদেশে নতুন মাত্রায় জঙ্গি তৎপরতা: বিবিসি

চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। সেনাবাহিনীর পোশাকও পাওয়া গেছে ওই বাড়িতে। গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা করছে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা এই বাড়িটিকে তাদের আস্তানা বানিয়েছিল। অভিযানের সময় অবশ্য বাড়িতে কেউ ছিল না। বাংলাদেশে জঙ্গিদের কাছ থেকে স্নাইপার রাইফেল উদ্ধারের ঘটনা বিরল। সেই সাথে সেনা পোশাক পাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। ওই বাড়ি থেকে স্নাইপার রাইফেল ও সেনা পোশাক ছাড়াও রিমোট ডিটোনেটর, বেশ কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, এটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির একটি আস্তানা। চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আক্তার বলছেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনজনকে আটক করার পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাড়িটির সন্ধান পেয়েছেন তারা।   সেখানে সেনাবাহিনীর পোশাকের সাথে মেজর পদবীর ব্যাজও পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, “মেজরের ব্যজ পাওয়া গেছে ইউনিফর্মের সাথে। তারা যে কোন ভাবেই হোক এটা সংগ্রহ করেছে।” বাংলাদেশে স্নাইপার রাইফেল উদ্ধারের বিষয়টি বেশ বিরল বলে উল্লেখ করে মি আক্তার বলেছেন, “অস্ত্রটির গায়ে লেখা আছে এমকে ডাবল ওয়ান। এধরণের স্নাইপার রাইফেল পাওয়ার খবর আমি আগে কখনো দেখিনি।” ইন্টারনেটে এই স্নাইপার রাইফেলটি নিয়ে একটু গবেষণা করে দেখা গেলো তার সাথে চট্টগ্রামের পাওয়া অস্ত্রটির ছবির কোনো মিল নেই। সেনিয়ে মি আক্তার জানান, এটি পুরনো ধরনের এমকে ইলেভেন। সেনিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে তিনি আলাপও করেছেন। গত ছ’মাস ধরে এই বাড়িটিকে একজন ভাড়া নিয়েছিলো বলে জানা গেছে। তবে অভিযানের সময় বাড়িতে কেউ উপস্থিত ছিলো না। মি আক্তার জানিয়েছেন, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ। “এদের একজনের বাড়ি মহেশখালী, একজনের ফেনি আর একজনের বাড়ি কুড়িগ্রামে। এদের বয়স চব্বিশ পঁচিশের মতো। এরা সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে।” পুলিশ বলছে, আটক ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুরে একটি কথিত জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সক্রিয় ১৬ টি গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধার করে। সেখানে এগুলো বানানোর একজন প্রশিক্ষকও ছিলো বলে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ মিরপুরের ওই বাড়িটিকে 'বোমা তৈরির কারখানা' বলে জানায়। এই অভিযানের মাত্র চারদিনের মাথায় হলো নতুন এই অভিযান। নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রব খান বলেছেন, সেনা পোশাক উদ্ধার আর তা ব্যবহারের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য কি সেটি বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, “ঢাকার কাফরুলে আর্মড পুলিশ ব্যটালিয়ন যেখানে পাহারা দিচ্ছিলো সেখানে আক্রমণ হয়েছে। আর চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর সুরক্ষিত এলাকায় দুটি মসজিদে হামলা হয়েছে। সেখানেই উদ্বেগের বিষয়। কারণ সেনাবাহিনীর পোশাককে ক্যামোফ্লাজ হিসেবে ব্যবহার করে যদি তারা ক্যান্টনমেন্ট বা সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালায় তা অত্যন্ত ভয়ের ব্যাপার হবে।” “এর আগে সেনাবাহিনীর পোশাকের ব্যাপারটি দেখিনি। এখন হয়ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরীক্ষা করে দেখবেন এগুলো আসল না নকল। কিন্তু যেটাই হোক তাদের কি ইচ্ছা ছিলো সেটা সেটাই উদ্বেগের বিষয়।” মি খান বলছেন, সবমিলিয়ে জঙ্গিদের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নতুন মাত্রার মুখোমুখি হচ্ছে।- বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.