ডেইলি টাইমসের সম্পাদকীয়- কূটনীতিক নিয়ে বিতর্ক

পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ফের আগুন নিয়ে খেলছে পাকিস্তান। এতে পুরনো ক্ষত নতুন করে জেগে উঠতে পারে। এ অবস্থায় পাকিস্তানের উচিত পররাষ্ট্রনীতির পর্যালোচনা করা। বাংলাদেশ সরকারকে আস্থায় নেয়া ও এক হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা। গতকাল পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত ডেইলি টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। এখানে ওই সম্পাদকীয়টির বাংলা রূপান্তর তুলে ধরা হলো: সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় নিযুক্ত হাইকমিশন থেকে একজন কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পাকিস্তান। এতে এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের একজন ফারিনা আরশাদকে পাকিস্তান প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র কর্মী ইদ্রিস শেখের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে পুরোপুরি তদন্ত শেষে বাংলাদেশ সরকার এ সপ্তাহের শুরুর দিকে পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানায় এই কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে নিতে। তবে এক্ষেত্রে পাকিস্তান নেতিবাচক ভূমিকায় ছিল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে ফারিনকে হয়রানি করছিল। পাকিস্তান বলেছে, তার বিরুদ্ধে অব্যাহত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ প্রচার করেছে মিডিয়া। এতে তাকে তথাকথিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যাখ্যান করার অবস্থান নেয়ার মধ্যে সমস্যার সমাধান নেই। বছরের পর বছর বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে এরই মধ্যে পাকিস্তান বেশ মতপার্থক্য সৃষ্টি করেছে। এ ইস্যুর স্পর্শকাতরতা সম্পর্কে অনুধাবন করা উচিত পাকিস্তানের। ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার ও মিডিয়া মিথ্যা এমনটা প্রমাণ করতেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। প্রক্সি যুদ্ধে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে এরই মধ্যে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এমন ভুলের বিষয়ে নীরব থেকে আমরা আরও সমস্যাকে আগ বাড়িয়ে টেনে আনতে পারি না।
ইসলামপন্থি জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাকিস্তানি কূটনীতিকের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম নয়। এই বছরের শুরুতে, বাংলাদেশে জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন অ্যাটাচে মোহাম্মদ মাহজার খানকে প্রত্যাহার করে আনে পাকিস্তান। এটা দুঃখজনক যে, অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে পাকিস্তান। এতে প্রমাণ হয় যে, ফের আগুন নিয়ে খেলছে পাকিস্তান। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে এভাবে প্রক্সি যুদ্ধ করার সক্ষমতা আমাদের আর নেই। এরই মধ্যে আমরা দেখেছি আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কের ফল। এতে তারা শুধু পাকিস্তানের জন্যই সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছে শুধু তা-ই নয়, একই সঙ্গে পুরো বিশ্বের জন্যও তারা হুমকি হয়ে উঠেছে। পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা করা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করার জন্য এটা পাকিস্তানের জন্য উপযুক্ত সময়। পাকিস্তান সৃষ্টিতে পূর্ব বাংলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এরপর আলাদা হয়ে যাওয়া একটি হৃদয়বিদারক বিষয়। সর্বশেষ কূটনীতিক ইস্যুতে বিতর্ক শুধুই পুরনো ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে পারে। পাকিস্তানের উচিত এমন কূটনৈতিক এডভেঞ্চার এড়িয়ে চলা। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা উচিত ও যে কাউকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী অর্থায়নে জড়িত পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে আস্থায় নিতে হবে পাকিস্তান সরকারকে এবং এ অঞ্চলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হাতে হাত রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.