পৌর নির্বাচনের আচরণবিধি চূড়ান্ত: মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রচারে নামতে পারবেন

সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও তাঁদের সমমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। তবে এই কাজে তাঁরা সরকারি সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না।
দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইন হওয়ার পর পৌরসভা নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত করা আচরণবিধিতে এই সুযোগ রাখা হয়েছে। আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, হুইপ, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে সরকারি সুবিধা ব্যবহার করবেন না।
গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভায় এই আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞ ও ইসি সচিবালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তার মতে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করবে। নতুন আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনাবিধি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আজ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে বলে ইসি সচিবালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান।
বিদ্যমান আচরণবিধি অনুযায়ী জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ, সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা পৌর নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের অনুকরণে এই আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেহেতু নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জন্য প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
তবে সংসদ নির্বাচনে সরকারি সুবিধা না নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও উপনির্বাচনে সেই সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইসি যে যুক্তিতে এ ধরনের আচরণবিধি করতে যাচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, জাতীয় নির্বাচন (সংসদ) আর স্থানীয় নির্বাচন (পৌরসভা) এক বিষয় নয়। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এই নির্বাচনের প্রচারে নামলে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র নষ্ট হবে। সরকারি সুবিধা না নিলেও তাঁদের উপস্থিতি নির্বাচনকেপ্রভাবিত করবে। তাঁরা যে সরকারি সুবিধা নেবেন না, বা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন না, সে নিশ্চয়তা কে দেবে? এই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না বলেই জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার ব্যক্তিদের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর যোগ্যতা: প্রস্তাবিত নতুন নির্বাচন পরিচালনাবিধিতে বলা হয়েছে, ৫০ হাজারের বেশি ভোটারের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীকে ২০০ ভোটারের সমর্থনসূচক সই সংগ্রহ করে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। ৫০ হাজারের কম ভোটারের এলাকার জন্য ১০০ ভোটারের সই লাগবে। আর সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের প্রার্থী হতে ৩০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক সই লাগবে।
বিধিতে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক পাবেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলো হলো: ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারম বোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারকেলগাছ, বড়শি, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার ও হেলমেট।
সংরক্ষিত আসনের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক হলো আঙুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম। সাধারণ কাউন্সিলরদের প্রতীক হলো উটপাখি, গাজর, টিউবলাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিম, ঢ্যাঁড়স, পাঞ্জাবি, পানির বোতল, ফাইল কেবিনেট, সেতু, ব্ল্যাকবোর্ড ও স্ক্রু ড্রাইভার।

No comments

Powered by Blogger.