মুক্তিযুদ্ধের পর কখনও এতটা অনিরাপদবোধ করিনি

ছেলে খুন হওয়ার চার দিন পর এবার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পরীবাগের বাসায় টেলিফোনে হত্যার হুমকি আসার পর এ উদ্বেগের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম না। তবে গতকাল সকাল থেকে আমি উদ্বিগ্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, এখন আমি অনিরাপদ বোধ করছি, যেমনটা ১৯৭১ সালে বোধ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর আমি কখনও এতোটা অনিরাপদ বোধ করিনি। তিনি বলেন, আমি আমার জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়। এ ছাড়াও ৬ দফা আন্দোলনের কারণে কখনও কখনও বোধ করেছি ৬০ এর দশকে। তাছাড়া সব সময় আমি শক্তি ও সাহস নিয়ে কাজ করেছি। গতকাল সকাল থেকে আমি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বোধ করছি। যেটা  মঙ্গলবার ছিল না।
তিনি বলেন, আমি এখনও পুলিশি নিরাপত্তা চাচ্ছি না। আরেকটু দেখতে চাই। আমার একটা ধারণা পুলিশ আমাকে কতক্ষণ নিরাপত্তা দিতে পারে। পুলিশ তো চারদিকে পরিবেষ্টিত হয়ে ঘিরে রাখতে পারবে না। আমি কাজে কর্মে বিভিন্ন জায়গা যাই। হাটে যাই, বাইরে যাই যে কোন জায়গায়ই তো আমাদের মেরে ফেলতে পারে।
অভিজিৎকে লাখো মানুষের মধ্যে মেরে ফেলেনি? কাজেই পুলিশের নিরাপত্তা ছাড়া যদি বেঁচে থাকতে পারি সেটাই ভাল। জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। আমি যে কোন অবস্থার জন্য তৈরি আছি। আপনি উদ্বেগ, শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এটি কী কারণে করেছেন জানতে চাইলে প্রফেসর কাসেম বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোন কথাই বলতে চাই না।
আবুল কাসেম ফজলুল হকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে হুমকি দেয়। এরপর থেকে তিনি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের পর অধ্যাপক কাসেম বলেছিলেন, তিনি পুত্র হত্যার বিচার চান না। মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় চান। তার বক্তব্যে দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মনে দাগ কাটলেও আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছিলেন, অধ্যাপক কাসেম হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাস করেন বলে তিনি বিচার চান না। তার এ বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠে চারপাশে। যদিও পরে হানিফ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
গত ৩১শে অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ কার্যালয়ে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। একই দিন লালমাটিয়ায় প্রকাশনী সংস্থা শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক-ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। হত্যা ও হামলা উভয় ঘটনার পর দায় স্বীকার করে টুইটারে বার্তা দেয় আনসার আল ইসলাম। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

No comments

Powered by Blogger.