ভূমিকম্পে নিহত কমপক্ষে ১৮০

হঠাৎ প্রচণ্ড বেগে কেঁপে উঠলো দক্ষিণ এশিয়া। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত সহ এ কম্পন অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশেও। রিক্টার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে তটস্থ হয়ে মানুষজন ঘরবাড়ি, অফিস ছেড়ে খোলা প্রান্তরে বেরিয়ে এসেছে পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানে। ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮০ জন। এর মধ্যে পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩০ জন। আফগানিস্তানে নিহত হয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে একটি স্কুলে তাড়াহুড়ো করে বেরুতে যেয়ে পদদলিত হয়ে নিহত হয়েছে ১২ ছাত্রী। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পে আহতের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে দুপুরের দিকে ওই ভূমিকম্পের পরে আসা কোন রিপোর্টেই নিহত বা আহতের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়। স্থানীয় মিডিয়াগুলো বলছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, অনেক দুর্গম এলাকায় যাওয়া সম্ভব হয় নি গতকাল। অনেক রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই এলাকায় যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ ঘটনায় ধসে পড়েছে অনেক দালান। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বত। নিহত হয়েছেন পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকা, বাজাউর এজেন্সি, কল্লার কাহার, সারগোধা, কাসুরে। রাজধানী ইসলামাবাদ ও পেশোয়ারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখানে সেখানে ভবন, দেয়াল ভেঙে পড়ে আছে। ভারতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে রাজধানী নয়াদিল্লি, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে। পাকিস্তানের করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিণ্ডি, পেশোয়ার, কোয়েটা, কোহাট ও মালাকান্ড শহরে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়েছে ভূমিকম্প। পাঞ্জাবে জারি করা হয়েছে উচ্চ সতর্কতা। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। অনলাইন ডনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথম দফায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের ৪০ মিনিট পরেই ফের ৪ দশমিক ৮ মাত্রার একটি কম্পন ফের আঘাত হানে। ভূমিকম্পের আঘাতে সোয়াত উপত্যকায় একটি শিশু সহ নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ছয় জন। উপজাতি অধ্যুষিত বাজাউর এলাকায় নিহত হয়েছেন চার জন। কল্লার কাহার এলাকায় নিহত হয়েছে ৮ বছর বয়সী একটি শিশু। কাসুরে ছাদ ধসে নিহত হয়েছেন একজন। আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের ইসলামগড়ে নিহত হয়েছে ১৪ বছর বয়সী একটি বালক। সারগোদায় একটি দেয়াল ধসে নিহত হয়েছেন এক নারী। সেখানে আহত হয়েছেন ১০ জন। খাইবার পখতুনখাওয়ায় আহত হয়েছেন ৩ জন। চিত্রলে নিহত হয়েছেন ৫ জন। রাওয়ালপিন্ডির রাজাবাজার এলাকায় ছাদ ধসে নিহত হয়েছে একটি শিশু। আহত কমপক্ষে ১৯৪ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে নেয়া হয়েছে সোয়াতের সাইদু শরীফ টিচিং হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা সরঞ্জামের রয়েছে অপর্যাপ্ততা। শতাধিক আহত ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে পেশোয়ারের লেডি রির্ডি হাসপাতালে। পাঞ্জাবের উদ্ধারবিষয়ক বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. আশরাফ জিয়া বলেছেন, সেখানে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ওদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ কেন্দ্রীয়, বেসামরিক, সামরিক, প্রাদেশিক সব বিভাগকে অবিলম্বে সতর্ক হতে বলেছেন। সব জনবল, সম্পদ ব্যবহার করে পাকিস্তানের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আইএসপিআর অনুযায়ী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ সেনাবাহিনীকে কোন নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে জরুরি উদ্ধার তৎপরতায় নেমে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামাবাদের অ্যাবোটাবাদের বাসিন্দা শোয়েব বলেছেন, ভূমিকম্পের ফলে সেখানে ভূমিধস হয়েছে।
ওদিকে ভারতের এনডিটিভি জানায়, শক্তিশালী ওই ভূমিকম্প স্থানীয় সময় বিকাল আড়াইটায় উত্তর ভারতে আঘাত হানে। তীব্র সেই কম্পন এক মিনিট স্থায়ী হয় দিল্লি, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব রাজ্যে। এ সময় দিল্লিতে মেট্রো চলাচল থেমে যায়, যদিও বিমানবন্দরে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলতে থাকে। দিল্লি মেট্রোর মুখপাত্র অনুজ দয়াল বলেন, ভূমিকম্পের সময় ১৯০টি মেট্রো রেলের সবগুলোই বন্ধ করে রাখা হয়। কম্পন শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে শুরু হয়েছে অপারেশন। কাশ্মীর অঞ্চলে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যায়। এ ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ভূমিকম্পের কথা শুনেছি। এ কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতেরও অনেক অংশে। আমি সবার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করি। এ সময় মোদি নির্বাচনী প্রচারণায় অবস্থান করছিলেন বিহারে। ছত্তিশগড়ের এক ব্যক্তি বলেছেন, আমরা যখন বাইরে বেরিয়ে পড়ি তখন দেখতে পাই গাড়িগুলো সমুদ্রের পানির মতো দুলছে। শ্রীনগরে মোবাইল ফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে লাল চক ফ্লাইওভার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে পাওয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক খবরে বলা হয় আফগানিস্তানে নিহত হয়েছেন ২৭ জন। ভূমিকম্পের সময় রাজধানী কাবুল দুলতে থাকে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল থেমে যায়। এ সময় গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে ফাঁকা স্থানে দাঁড়ান যাত্রীরা। ভূমিকম্পের সময় আফগানিস্তানের তাখার প্রদেশে একটি স্কুলে পদদলিত হয়ে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১২ ছাত্রী। তাখার শিক্ষা বিভাগের প্রধান এনায়েত নাবিদ বলেছেন, তালুকান শহরের ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা হুড়মুড় করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে আরও কমপক্ষে ৩৫ জন।
এ নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে জানায়, ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৭। পরে তা ৭ দশমিক ৬, তারপর ৭ দশমিক ৫ মাত্রার বলে বলা হয়। তবে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের ভূকম্পনবিষয়ক পরিচালক বিনীত গাহলোচ বলেন, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালা। অন্যদিকে পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ১।

No comments

Powered by Blogger.