ইতালীয় নাগরিক হত্যা: ৪ সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার, নেপথ্যে ‘বড় ভাই’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ডিএমপির কমিশনার
আছাদুজ্জামান মিয়া (ডানে)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি)
মনিরুল ইসলাম l ছবি: প্রথম আলো
ঘটনার ২৮ দিন পর ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের কথা জানাল পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
সিজার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কথিত বড় ভাইয়ের লক্ষ্য ছিল বিদেশি নাগরিক খুন করে দেশকে চাপের মধ্যে ফেলা। তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। তবে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার রাজধানীর গুলশান ও বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে ইতালির নাগরিক সিজার হত্যায় জড়িত অভিযোগে মো. রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল ওরফে বিদ্যুৎ রাসেল (৩৫), মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল ওরফে কালা রাসেল (৪০), তামজিদ আহম্মেদ ওরফে রুবেল ওরফে মোবাইল রুবেল ওরফে শুটার রুবেল (৩৫) ও মো. শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুলশান থানায় দায়ের করা সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁদের মধ্যে রাসেল চৌধুরীকে গুলশান, মিনহাজুল আরেফিনকে বাড্ডার সাতারকুল, তামজিদ ও শাখাওয়াতকে মধ্য বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরের ফুটপাতে সিজারকে (৫১) গুলি করে হত্যা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গ্রেপ্তার তামজিদ, রাসেল চৌধুরী ও শাখাওয়াত হোসেন হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। মিনহাজুলের তথ্য ও দেখানো মতো হত্যায় ব্যবহৃত এফজেডএস সাদা রঙের মোটরসাইকেলটি মধ্য বাড্ডায় শাখাওয়াতের বাসার গ্যারেজ থেকে জব্দ করা হয়। এ সময় শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিনহাজুল ও রাসেল চৌধুরী মাদকাসক্ত। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এর আগেও তাঁরা কারাভোগ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, তামজিদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ঠান্ডা মাথার খুনি। তাঁর অপরাধের খতিয়ান পুলিশের কাছে আছে। শাখাওয়াত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অস্ত্র সরবরাহে যুক্ত।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে অপরাধের ধরন, প্রকৃতি বিশ্লেষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে খুনিদের প্রযুক্তি, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) ফুটেজের সহায়তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মালিক শাখাওয়াত জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, মিনহাজুল একটি অপারেশনে যাওয়ার কথা বলে অনুরোধ করে তাঁর মোটরসাইকেলটি নিয়ে যান। মিনহাজুলের সঙ্গে শাখাওয়াতের সুসম্পর্ক। রাতে আবার মিনহাজুল তাঁকে মোটরসাইকেলটি ফেরতও দেন।
ডিএমপি কমিশনার আসামিদের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা বলেছেন, ২৮ সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ডের আগে রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কের পূর্ব দিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিসের সামনে অপেক্ষা করেন। পরে মিনহাজুল ও তামজিদ মোটরসাইকেলে এসে রাসেল চৌধুরীর সঙ্গে একত্র হন। ৯০ নম্বর সড়ক ধরে পূর্ব দিক দিয়ে সিজারকে পশ্চিমে যেতে দেখেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল এই বিদেশি নাগরিককে হত্যার জন্য তামজিদকে দেখিয়ে দেন। পরে তাঁরা তিনজনে মোটরসাইকেলে এই বিদেশিকে অনুসরণ করে ৯০ ও ৮৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থলে মোটরসাইকেলটি থামান। তখন তামজিদ সিজারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে সিজার মাটিতে শুয়ে পড়েন। তখন তামজিদ দৌড়ে দুজনের পেছনে মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা বলেন, একজন বড় ভাই বিদেশিকে খুন করার জন্য তাঁদের ভাড়ায় নিয়োগ করেন। খুনের আগে তাঁদের অর্ধেক টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও আর দেওয়া হয়নি। পুলিশের তৎপরতার কারণে তাঁরা পালিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করে বড় ভাইকে শনাক্ত ও অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন, ওই বড় ভাইয়ের পেছনে মদদদাতা ও লাভবান হচ্ছেন কারা, সেই বিষয়গুলো নিবিড় তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এর পেছনে কারা আছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা (বাঁ থেকে)
তামজিদ আহম্মেদ ওরফে রুবেল, শাখাওয়াত হোসেন
ওরফে শরিফ, রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল
আরিফিন ওরফে রাসেল l ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: একজন বিদেশির লাশ ফেলা, নাকি এটা টার্গেট কিলিং ছিল, এ জন্য গ্রেপ্তারকৃতরা কত টাকা পেয়েছেন?
ডিএমপি কমিশনার: গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, এটা টার্গেটিং কিলিং না। বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও বিদেশি একজন নাগরিককে খুন করলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এতে সরকার চাপ ও বেকায়দায় পড়ে যাবে। বিদেশি নাগরিক, বিশেষ করে পশ্চিমা নাগরিকেরা নিরাপদ নয় বলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার অপকৌশল হিসেবে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনজনের তথ্যে টাকার অঙ্কের গরমিল আছে। তাঁদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব প্রশ্নের জবাব মিলবে।
প্রশ্ন: কথিত বড় ভাইয়ের সঙ্গে জঙ্গি, না কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে?
ডিএমপি কমিশনার: সিজার হত্যা মামলায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ ও আলামত এখন পর্যন্ত মেলেনি। আইএস এই কাজ করেছে বলে যে প্রচার চালিয়েছে, সে বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে আইএস নাটক সাজানো হয়েছে। পুলিশের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী, পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারকে চাপে ফেলে তাদের অন্যায় ও অসাধু উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য আইএসের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন: ১০ দিন আগে রাসেল চৌধুরীকে আটক করে আজ (গতকাল) উপস্থাপন করা হয়েছে, তাঁদের বাসায় ডিবি পরিদর্শক তাঁর মোবাইল নম্বরও দিয়ে এসেছেন। বিষয়টি যদি ব্যাখ্যা করতেন।
ডিএমপি কমিশনার: এটা তথ্যনির্ভর নয়। পুলিশের তৎপরতার কারণে আসামিরা পালিয়ে থাকতে পারেন। গত রোববার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রশ্ন: হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা কত দিনের, কবে থেকে টার্গেট করা হয়েছিল?
ডিএমপি কমিশনার: আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদে এক ভাড়াটে খুনি একযোগে সব স্বীকার করবে, তা প্রত্যাশা করা যায় না। এখন পর্যন্ত তাঁরা যে তথ্য দিয়েছেন তাঁদের টার্গেট সিজার তাবেলা ছিলেন না। কারণ তাঁদের বড় ভাইয়ের নির্দেশ ছিল, বাংলাদেশে বিদেশিরা নিরাপদে নেই। এতে সরকারকে চাপে ফেলানো যাবে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল বিদেশি নাগরিক।
এক আসামির স্বীকারোক্তি
সিজার তাবেলা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। তাঁদের মধ্যে চাক্কি রাসেল, ভাগনে রাসেল ও শরীফকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মাহবুবুর রহমান তিন আসামির রিমান্ড বিষয়ে শুনানি শেষে প্রত্যেককে আট দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
আর তামজিদ আহম্মেদ আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। গতকাল বিকেলে ঢাকার মহানগর হাকিম শাহারিয়ার মাহমুদ আদনান তাঁর খাসকামরায় তামজিদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, আসামি তামজিদ আদালতে সিজার তাবেলা হত্যার কথা স্বীকার করেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, চাক্কি রাসেল ও ভাগনে রাসেল ওরফে কালা রাসেল দুজনে বন্ধু।
জবানবন্দিতে তামজিদ আহম্মেদ বলেছেন, ‘ঘটনার দিন হত্যাকাণ্ডের স্থলে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল। মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল ওরফে কালা রাসেল মোটরসাইকেল চালিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। আমি মোটরসাইকেল থেকে নামি। তখন চাক্কি রাসেল ইশারা দিয়ে সিজার তাবেলাকে দেখিয়ে দেয়। তখন আমি তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর চারটি গুলি করি। এরপর আমরা মোটরসাইকেলযোগে বাড্ডার একটি মাঠে যাই।’
নিজের জড়িত থাকার ব্যাপারে তামজিদ বলেন, ‘কালা রাসেলকে বড় ভাই হিসেবে জানি। কোরবানি ঈদের কয়েক দিন আগে কালা রাসেলের কাছ থেকে ৫০০ পিস ইয়াবা কিনে নিই। এর বিনিময়ে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। ঈদের আগে ইয়াবা কেনা বাবদ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করি। বাকি থাকে ৪০ হাজার টাকা। ঈদের দিন আমাকে কালা রাসেল বলে, বাকি টাকা দিতে হবে না। একটা কাজ করে দিতে হবে।’
তামজিদ আরও বলেছেন, চাক্কি রাসেল ও কালা রাসেল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ঈদের পরদিন কালা রাসেল তাঁকে চাক্কি রাসেলের কাছে নিয়ে যান। তখন চাক্কি রাসেল বলেন, গুলশান এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে হবে। একজনকে গুলি করে হত্যা করতে হবে।
সিজার তাবেলাকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র প্রসঙ্গে তামজিদ বলেন, ‘আমি যে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছি তা মধ্য বাড্ডার ভাঙারি সোহেলের। সোহেলের কাছ থেকে এই অস্ত্র নিয়ে আসে চাক্কি রাসেল। গুলি করার পর ওই অস্ত্র আবার চাক্কি রাসেলের কাছে ফেরত দিই। চাক্কি রাসেল আবার ভাঙারি সোহেলের কাছে ফেরত দেয়।’
পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ মিয়া আসামি তামজিদ আহম্মেদ ওরফে শুটার রুবেলের জবানবন্দি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
ওরা জড়িত নয়, দাবি স্বজনদের
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) গ্রেপ্তার করা মিনহাজুল আরিফিন ওরফে রাসেল (৪০), শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ (৩৫), রাসেল চৌধুরী (৩৫) ও তামজিদ আহম্মেদ ওরফে রুবেল (৩৫) ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাঁদের স্বজনেরা।
মিনহাজুল আরিফিন সপরিবারে রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় থাকেন। তাঁর বাবা সিরাজুল ইসলাম গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, মিনহাজুল পুরোনো আসবাবের ব্যবসা করেন। ১২ অক্টোবর এলাকার রাস্তা থেকে ডিবি পরিচয়ে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিতে গেলে বলা হয়, মিনহাজুল নামের কাউকে আটক করা হয়নি। তাঁর নিখোঁজের বিষয়ে ১৬ অক্টোবর বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর তিন ছেলে-চার মেয়ের মধ্যে মিনহাজুল সবার ছোট। বছর পাঁচেক আগে মিনহাজুলকে বিয়ে করানো হয়। এর তিন মাস পর মিনহাজুলের স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি পাবনার মানসিক হাসপাতালে আছেন। স্ত্রীর অসুস্থতার পর মিনহাজুল মাদকসক্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে স্থানীয় একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়েছে। দেড় বছর আগে পাঁচটি ইয়াবা রাখার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, মিনহাজুল মাদক ব্যবসায় জড়িত নন। মানুষ খুন করা তো দূরের কথা, মুরগি জবাই করার মতো সাহসও তাঁর নেই। গতকাল টিভি দেখে ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বলির পাঁঠা হয়েছেন। ছেলে গ্রেপ্তারের খবরে মিনহাজুলের পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
গ্রেপ্তার করা শাখাওয়াত হোসেনও মধ্য বাড্ডায় থাকতেন। গতকাল রাতে বাড়িটি তালাবদ্ধ দেখা যায়। তবে পাশেই আরেকটি বাড়ি আছে তাঁদের। ওই বাড়িতে থাকেন তাঁর ভাই মো. সোহাগ। তিনি বলেন, ১৪ অক্টোরব রাতে মোটরসাইকেলসহ শাখাওয়াতকে ডিবি পরিচয়ে আটক করে নিয়ে যায় কয়েকজন ব্যক্তি। এরপর ডিবি কার্যালয়ে গেলে বলা হয়, ডিবি শাখাওয়াতকে আটক করেনি।
সোহাগ বলেন, মধ্য বাড্ডায় তাঁদের একাধিক বাড়ি আছে। এসব বাড়ির ভাড়া তুলে শাখাওয়াত চলতেন। শাখাওয়াত স্থানীয় বিএনপির কর্মী। দুই বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি আর বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, গতকাল টিভিতে শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তারের কথা জেনেছেন। এতে তিনি বেঁচে আছেন দেখে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তাঁদের পরিবার। তবে তিনি মনে করেন, তাঁর ভাই নির্দোষ। এলাকার মানুষের বিভিন্ন ধরনের উপকার করতেন তিনি।
রাসেল চৌধুরীকে ১০ অক্টোবর দক্ষিণ বাড্ডার বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তাঁর মা আফরোজা আক্তার বলেন, রাসেল বিএনপির সমর্থক, কোনো পদে নেই। বিএনপির মিছিল-সমাবেশে যেতেন। আগে বিদ্যুৎ বিভাগে ঠিকাদারি করলেও কয়েক বছর ধরে বেকার। এলাকায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা আছে। এ ছাড়া কোনো থানায় জিডি বা মামলা নেই। তিনি মনে করেন, তাঁর ছেলে মানুষ খুনে জড়িত নন। রাসেলের বাবা শাহজাহান চৌধুরী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী।
তামজিদ আহম্মেদের মা শিরিজান বেগম ও মামা তৌহিদ মিয়া বলেন, ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তামজিদ নিখোঁজ ছিলেন। বিভিন্ন স্থানে ও ডিবি কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর সন্ধান মেলেনি। পরে নিখোঁজের ঘটনায় বাড্ডা থানায় জিডি করা হয়। গতকাল টিভিতে দেখেছেন, তামজিদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা বলেন, তামজিদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলা কিংবা জিডি নেই। তাঁরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করেন না, তামজিদ মানুষ খুন করেছেন।
তৌহিদ মিয়া বলেন, চার বছর বয়সে তামজিদের বাবা মারা যান। এরপর তাঁর কাছে বেড়ে ওঠেন তিনি। মুঠোফোন মেরামত ও বৈদ্যুতিক কাজ করতেন তিনি। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। গ্রেপ্তারের খবর জেনে তামজিদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
সিজার হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে তদন্তকারীদের শনাক্ত করা তামজিদ ও রাসেল চৌধুরীর বিষয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানে সিজারকে (৫১) গুলি করে হত্যা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.