আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করছে টিআইবি -সংবাদ সম্মেলনে সংসদের চিফ হুইপ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রাষ্ট্র এবং সংসদকে অকার্যকর করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তিনি বলেন, তারা একটি চক্রের পেইড সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় সংসদ নিয়ে টিআইবি যেসব মন্তব্য করেছে, তাদের এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার কে দিয়েছে? তারা নিজেরাই নাচের পুতুল। প্রভুদের সুতার টানেই তারা নাচে। টিআইবির অর্থের উৎস কোথায় এটি জানতে চায় জনগণ। টিআইবি তাদের সীমা লঙ্ঘন করেছে। গতকাল সংসদ সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে টিআইবির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংসদ সচিবালয়ের পক্ষে এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। এর আগে রোববার দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন সম্পর্কিত পার্লামেন্ট ওয়াচ প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এ সময় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, কিভাবে আইন হবে তা টিআইবির কাছ থেকে শিখতে হবে না। অনুরোধ করব আগামী নির্বাচনে টিআইবির প্রতিনিধিরা যেন অংশ নেয়। শুনেছি টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাট আছে। তিনি ফ্ল্যাটের মূল্য কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছেন। তার ফ্ল্যাট কেনার আয়ের উৎস কী, সেটা আমরা জানতে চাই। চিফ হুইপ বলেন, এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধান ও চলমান মহান জাতীয় সংসদকে অবজ্ঞা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপমান করা হয়েছে। এ ধরনের অসাংবিধানিক মন্তব্যকে আমরা তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, এর আগে সংসদে বিএনপির বিরোধী দলের সদস্যরা নিয়মিত সংসদে অনুপস্থিত থেকেছেন, মাইক ভেঙেছেন, ক্যামেরাম্যানকে আঘাত করেছেন, বিনা কারণে ওয়াক আউট করেছেন এবং সংসদে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে সংসদের ভাবমূর্তি কলুষিত করেছেন। কিন্তু টিআইবি এ বিষয়টি কোনভাবেই তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। এটি অবশ্যই পক্ষপাতদুষ্ট এবং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে বলেই মনে হয়। কিন্তু বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা নিয়মিত সংসদে উপস্থিত থেকে সংসদে গঠনমূলক  সমালোচনা ও আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদকে প্রাণবন্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সংসদে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার এবং নিয়মিত অনুপস্থিত থাকা যদি সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি হয় তাহলে আমরা এক্ষেত্রে বিএনপি সম্পর্কে কিছু বলতে আগ্রহী নই। এটা বিচারের ভার জনগণের ওপর অর্পণ করলাম। চিফ হুইপ বলেন, একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা কোন দলের নিজস্ব বিষয়। এখানে জোর জবরদস্তির কোন সুযোগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি না। টিআইবি এ বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনে কোন মন্তব্য করেনি। বিষয়টি সবার মনে সন্দেহের উদ্রেক করে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ ক্ষমতাসীন দলের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ভুবনে পরিণত হয়েছে। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেলে তাতে আওয়ামী লীগের দোষ কোথায় সে বিষয়টি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। টিআইবির প্রতিবেদন সম্পর্কে চিফ হুইপ বলেন, সমপ্রতি দুজন বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে হামলা করা হয়েছে, সেখানে একজন মারা গেছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের দেশীয়চক্র এ কাজ করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে টিআইবি এই প্রতিবেদন দিয়েছে এবং সংসদ সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি সংসদের বাইরে বসে সংসদের সমালোচনা করবে, গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারবে, বিদেশীদের হত্যা করবে, মৌলবাদীদের দোসর হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু এসব নিয়ে টিআইবি কিছু বলে না। আন্তর্জাতিক মহল কারা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে, তারাই আন্তর্জাতিক মহল।
ডেপুটি স্পিকার: এদিকে টিআইবির রিপোর্ট অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেছেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি বলেন, টিআইবির কিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ বাস্তবসম্মত হলেও স্পিকারকে নিয়ে মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, স্পিকার সব সময়ই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর অসংসদীয় ভাষা বন্ধের ক্ষেত্রে সব সময়ই সতর্ক ছিলেন। আমিও সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব থাকাকালে প্রতিটি মুহূর্তে কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করেছি। এছাড়া অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এ সংসদে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দল ঐক্যমতে পৌঁছানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফলে এই সংসদের সফলতাই বেশি বলে তিনি দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.