‘ভোট কেনা হয় ফ্লেক্সিলোড আর বিকাশে’

রাজনীতির সংস্কৃতিতে যেমন পরিবর্তন হচ্ছে তেমনি ভোট কেনার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ভোট কেনা হয় ফ্লেক্সিলোড আর বিকাশের মাধ্যমে। নির্বাচন কমিশনার থাকাকালীন (২০০৮-২০১৩) রাজশাহী ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে অভিনব পদ্ধতিতে ভোট কেনার অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি) আয়োজিত নির্বাচন সংক্রান্ত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।
২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোট চলাকালীন আমাদের কাছে অভিযোগ আসলো যে, ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে ভোট কেনাবেচা হচ্ছে। নিজেরা আলোচনা করে ওই এলাকার (রাজশাহী শহরের)  ফ্লেক্সিলোড বন্ধ রাখা যায় কিনা সেই চিন্তা করেছিলাম। এখন তো আরও সহজে লেনদেন সম্ভব। কারণ বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যক্তিগত লেনদেন করা যায়।’ একই সময়ে হওয়া বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন এলাকা থেকে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা যখন রাজশাহীর অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করছিলাম ঠিক ওই সময়ে বরিশাল থেকে অভিযোগ আসলো কোন কোন প্রার্থী অনেক ভোটারের দোকানের বাকি পরিশোধ করে দিচ্ছেন’। তিনি বলেন, ‘অনেক প্রার্থী নেতৃস্থানীয় ভোটারদের (যারা অন ভোটারদের ওপর প্রভাব রাখেন) ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করে দিচ্ছেন। তখন দেখা গেল, তাৎক্ষণিকভাবে এগুলোর প্রমাণ পাওয়া যেমন সমস্যা তেমনি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা আরও কঠিন।’ ‘তাই অনেক বিষয়ে জেনেও প্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না’ বলে মন্তব্য করেন সাখাওয়াত হোসেন। ভারতেও এই বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে পরিগণিত বলে জানান তিনি।
গোলটেবিল বৈঠকে ‘দ্য স্টেটস অব ইলেকশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইডব্লিউজি-এর পরিচালক ড. আবদুল আলিম। এতে ২০১৩ সালের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ২০১৫ সালের ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অবস্থা তুলে ধরা হয়। বক্তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বিঘœ ভোট প্রদান এবং ভোট পরবর্তী সময়ে সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেন। তবে, নির্বাচন কমিশনকেও দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন একাধিক বক্তা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মনজুর হাসান, ইডব্লিউজি-এর স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হাসান এম মজুমদার প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.