কৃত্রিম চীনা দ্বীপের কাছে টহলদারি মার্কিন রণতরীর, 'তাইওয়ান আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন'

চীনাদের বানানো কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে আমেরিকা ও লালচিনের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিনিয়ত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে সোমবার গভীর রাতেমার্কিন নৌবহরের একটি ডেস্ট্রয়ার দক্ষিণ চীন সাগরে ঢুকেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগকে উদ্ধৃত করে এই খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের।
জানা গেছে, ল্যাসেন নামের গাইডেড মিসাইলবাহী ডেস্ট্রয়ারটি কৃত্রিম দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মার্কিন নৌবাহিনী স্পষ্টতই জানিয়েছে, যেহেতু ওই পানিসীমা বিতর্কিত, তাই চিনা নৌবাহিনীকে আগাম সে খবর প্রয়োজন তারা বোধ করেনি। অর্থাৎ, এই কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে বেইজিংকে এবার সরাসরি একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ওবামা প্রশাসন৷
চীন সাগরে ঢুকে পড়ার এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। চীনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম সিসিটিভিকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র হুঁশিয়ারি, “যেকোনো বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে দু’বার ভাবুন।”
সেই হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, “আন্তর্জাতিক পানিসীমায় মহড়া চালাতে কারো কাছে অনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
দক্ষিণ চীন সাগর ও পূর্ব চীন সাগরের একটি বড় এলাকা বহুদিন ধরেই নিজেদের পানিসীমা বলে দাবি করছে চীন। বস্তুত সেই মাও সে তুংয়ের সময় থেকে৷
'তাইওয়ান আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন'
তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার বলেছে, চীন সক্রিয়ভাবে তার সামরিক বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে এবং ২০২০ সাল নাগাদ তারা তাইওয়ান আক্রমণ করার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
তাইওয়ানের চলতি বছরের প্রতিরক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক সত্ত্বেও চীন ব্যাপক পরিসরে যুদ্ধ-সামর্থ্য বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে, যা সমুদ্র প্রণালীর উভয় পাশে একটি সামরিক সংঘাতের হুমকি জিইয়ে রাখবে।’
এতে বলা হয়, ‘চীনের মূল ভূ-খণ্ডের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির হার গত দশকে গড়ে ডাবল ডিজিটে উন্নীত হয়েছে, যা একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম।’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এ দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলে কেনো ধরনের আগ্রাসনে বিদেশী বাহিনীর হস্তক্ষেপ ঠেকাতে চীন তার নৌ ও বিমান বাহিনীকেও শক্তিশালী করে তুলছে।
এতে বলা হয়, চীন বিশ্বাস করে যে, তারা তাইওয়ান আক্রমণ করলে বিদেশী হস্তক্ষেপই হবে তাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে এক গৃহযুদ্ধের পর চীন ও তাইওয়ান ভাগ হয়ে যায়।
তাইওয়ানের বর্তমান চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মা ইং-জিয়াউ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে।
চীন এখনো তাইওয়ানকে তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভূ-খণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করে থাকে। তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে চীন শক্তি প্রয়োগ করবে না এমন ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্ধিত হারে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কারণে তাইওয়ানের পাহারা শিথিল হওয়ার আশংকা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.