ব্লগার তারেক ভারতে আশ্রয় চেয়েছেন

বাংলাদেশে ব্লগারদের বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের ক্রমাগত হুমকিতে আতঙ্কিত ব্লগাররা গোপনে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনই এক ব্লগার ঝালকাঠির সুবিদপুর গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুল বারির পুত্র  মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তারেক হত্যার হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। দিল্লিতে রাষ্ট্রসংঘের রিফিউজি সংক্রান্ত মিশনের প্রধানের কাছে এ ব্যাপারে তিনি আবেদন করেছেন। বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আশ্রয়ে বর্তমানে দিন কাটছে তারেকের। মাসুম-এর পক্ষ থেকে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধানের কাছে তারেককে যেন জোর করে ভারত থেকে বিতাড়িত করা না হয় সেই আবেদন জানানোর পাশাপাশি তাকে আশ্রয় দেয়ারও আবেদন জানানো হয়েছে। মাসুম সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিসিএস-এডুকেশন ক্যাডারের অফিসার তারেক বরিশালের সরকারি ফজলুল হক কলেজে কর্মরত অবস্থায় গত বছর মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হন। ঘটনাটি শিক্ষামন্ত্রীকে জানালে তিনি তারেককে বরিশাল মহিলা কলেজে বদলির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু সেখানেও তারেককে মৌলবাদীরা নিয়মিত অনুসরণ করতে থাকে। গত ৩১শে জুলাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম করে তাকে ফোনে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়। এ অবস্থায়  তারেক বৈধ ভিসা নিয়ে এবং কলেজে ছুটি নিয়ে ভারতে চলে এসেছিল। কিন্তু ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতি না মেলায় তারেককে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হয়। কিন্তু সেখানে ফিরে যাওয়ার পর ফের তার ওপর মৌলবাদীদের নজরদারি চলতে থাকে। আতঙ্কিত তারেক ফের ভারতে চলে আসে। পথে অবশ্য বারে বারে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাইতে হয়েছে। কিন্তু ভিসার জন্য নতুন করে আবেদন করার সুযোগ না থাকায় সে গোপনে ভারতে আসতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত মাসুম-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে বর্তমানে তাদের আশ্রয়ে রয়েছেন তারেক। বাংলাদেশে যে ক’জন ব্লগার ইতিমধ্যে খুন হয়েছেন এদের প্রত্যেকের সঙ্গে তারেকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। গত আগস্টে নিহত ব্লগার নীল নীলয়-এর সঙ্গে মৃত্যুর আগেও কথা হয়েছিল ব্লগারদের নিরাপত্তার সংকট নিয়ে। এ নিয়ে ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবরে গত ১৪ই অক্টোবর একটি চিঠি লিখেছেন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর সেক্রেটারি কিরিটি রয়। ওই চিঠিতে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ সরকার। নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কথা হয় তারেকের। এ সময় নীলাদ্রি তাকে অবহিত করে যে, তাকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বার বার হুমকি দিচ্ছে। এতে তিনি আতঙ্কিত। তাই তিনি বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে নি। এ অবস্থায় তারেক স্থানীয় থানায় তাকে দেয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হুমকির বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দেয়া হুমকির এসএমএস দেখান তাদেরকে। এতে ৩১শে জুলাই ঝালকাঠি সদর থানায় ১৪৮৯ নম্বরের সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, নীলাদ্রিকে হত্যার পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পরবর্তী টার্গেট ছিলেন তারেক। তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করতো ঘাতকদের গ্যাং। মৌলবাদীদের চক্র দেশে তাকে অনুসরণ করতো। তারা তাকে পাহারায় রাখতো। তাকে ফাঁকে পাওয়ার সুযোগ খুঁজতো। এ অবস্থায় দেশে থাকা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে তার জন্য। তাই তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যান। অল্প সময়ের মধ্যে তার চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে ১০ই আগস্ট ভারতে চলে যান। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ বছর ২৩শে সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। যদিও তিনি সাক্ষাৎ করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা তাকে ২০শে মার্চ পর্যন্ত ভারতে থাকতে অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বারাসাত পুলিশ তাকে অনুমতি দেয় নি। কোন বিকল্প না পেয়ে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। তিনি খুলনা পুলিশ স্টেশনে আশ্রয় নেন। সেখানে তাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়। ২৭শে সেপ্টেম্বর তিনি বাড়ি পৌঁছেন। সেখানে সেই একই গোষ্ঠীর নজরে পড়েন তিনি। অতঃপর ৩০শে সেপ্টেম্বর তিনি আবার জীবন বাঁচাতে ভারতে চলে যান। এ সময় তিনি ভিসা আবেদন করার সময়ও পান নি। তিনি বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথে তাকে অনুসরণ করতে থাকে সেই চক্রটি। এ অবস্থায় একটি মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। তার তৎপরতায় পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দেয়। তিনি পরে অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করে মাসুম-এর আশ্রয়ে রয়েছেন। তার জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবগত। তার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রফেসর এমিরেটাস ও বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. রফিকুল্লাহ খান ও ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।

No comments

Powered by Blogger.