হঠাৎ বাস বন্ধ: পরিবহনশ্রমিকেরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?

বিশৃঙ্খলার চরমে পৌঁছেছে দেশের পরিবহন খাত। তা যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয় হোক বা নিয়ম মেনে ভাড়া আদায়ের বিষয়ই হোক। পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপ যে শৃঙ্খলা আনার কোনো উদ্যোগই এখন আর কাজে আসছে না। গত রোববার রাজধানী ঢাকায় কোনো ঘোষণা ছাড়া সাত ঘণ্টা বাস বন্ধ থাকার ঘটনাটি প্রমাণ করে দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।
যাত্রীদের তরফে অভিযোগ আছে যে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে গণপরিবহনগুলোতে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে ভাড়ার হালনাগাদ তালিকা বাসে রাখা ও যাত্রীদের তা দেখানো। কিন্তু চালক বা তাঁদের সহকারীরা তা মানেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত রোববার একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ভাড়ার তালিকা না পেয়ে চালকের সহকারীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন।
৭ ঘণ্টা বাস বন্ধ, ভোগান্তি
এরপরই পরিবহন শ্রমিকেরা মিরপুর ১০ নম্বরকেন্দ্রিক সব বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের পরিবহনশ্রমিকেরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? বাসে একটি ভাড়ার তালিকা রাখা কি খুব কঠিন কাজ?
গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা অভিযোগে গতকাল এক গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ঢাকা শহরের ৮৭ ভাগ যানবাহন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। সমিতির সভাপতি বিবিসিকে বলেছেন, এখানে মালিকদের এমন একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পরিবহন খাতের আজকের এই অবস্থা অবশ্য এক দিনে হয়নি। আর এর দায় শুধু পরিবহন মালিক বা শ্রমিকদেরও নয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর যথাযথ নজরদারির অভাব, নানামুখী দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার ফলেই আজকের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ এবং পরিকল্পিত ও ধারাবাহিক উদ্যোগ ছাড়া এর থেকে উত্তরণের পথ নেই। স্বার্থান্বেষী মহলের অন্যায় আবদার উপেক্ষা করে সরকার সেটি করতে প্রস্তুত আছে কি?

No comments

Powered by Blogger.