কারও এবারই শেষ, কারও শুরু... by সফি খান

দাসিয়ারছড়ায় চলছে দুর্গাপূজা। -প্রথম আলো
উত্তরের জেলাগুলোতে এরই মধ্যে পড়ে গেছে শীতের আমেজ। গতকাল সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম শহর থেকে দাসিয়ারছড়ার দিকে যেতে চোখে পড়ে কুয়াশাভেজা সড়ক। ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে দাসিয়ারছড়ায় ঢুকেই কানে আসে ঢাকের বাজনা। ওই ঢাকের শব্দ অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে দেখা যায় নানা বয়সী ছেলেমেয়েদের ভিড়।
৬৮ বছর পর সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষ এরই মধ্যে দুর্গাপূজা উৎসবে মেতে উঠেছে। ঢাকের শব্দ, উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে গতকাল সকালে এখানকার দুটি মন্দিরে দুর্গাপূজা শুরু হয়। এখানকার যেসব পরিবার ভারতে চলে যাবে, এবার এ দেশে তাদের শেষ পূজা। যারা থাকবে তাদের প্রথম।
কামালপুর দেবীরপাটে ঢুকেই চোখে পড়ে টিনের চালা দিয়ে তৈরি মন্দির। সামনে কারুকাজ করা বাঁশের বেড়া। ভেতরে দুর্গাপ্রতিমা। মন্দিরের সামনে নারী-পুরুষের ভিড়। ঢাকঢোলের শব্দ, উলুধ্বনি, ধূপের গন্ধ ও মানুষের চিৎকারে চারদিক মুখরিত।
মন্দিরে ঢোকার পথে খুঁটি গাড়ার কাজ করছিলেন আফছার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কম। তাই হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশেই কাজ করি। কাজের শেষে সবাই মিলেই পূজার আনন্দ করি।’
মন্দিরের সামনে পূজা দেখছেন কৃষ্ণ কান্ত বর্মণ। ভারতে যাওয়ার জন্য তিনি নাম নিবন্ধন করেছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তিনি বলেন, ‘হামরা আগত ছিটের মানুষ আছিনু। অ্যালা বাংলার মানুষ। প্রথম পূজা। খুব আনন্দ করমো।’
গৃহবধূ পারুল রানী, সবিতা রানী ও সুন্দরী বালা বলেন, বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর কখনো পূজা দেখেননি তাঁরা। এবারই প্রথম।
দেবীরপাট থেকে ছোট কামাত পূজামন্দিরে যাওয়ার পথটি আঁকাবাঁকা। পথে কথা হয় হরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হামরা ভারতে চলি যাম। বাংলা দ্যাশোত শ্যাষ পূজা। আনন্দের সাতে করমো।’
ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের নেতা ও দাসিয়ারছড়া ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, দাসিয়ারছড়ায় দুটি পূজা হচ্ছে। একটি ছোট কামাত হরেকৃষ্ণ বিএসসির বাড়িতে। অপরটি কামারপুর দেবীরপাট বিপুল চন্দ্রের জমিতে। এখানে মোট লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। হিন্দু পরিবারের সংখ্যা ১৬৫টি। এসব পরিবারের মোট লোকসংখ্যা মাত্র ৫৫০ জন। এখানে হিন্দু-মুসলমান মিলেই পূজা উদ্যাপন করছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি হরেকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, সরকারি অনুদানে পূজা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে সংখ্যায় কম। মুসলমানরাও চাঁদা দিচ্ছে। ছিটে কখনো উৎসব হয় না। পূজাকে ঘিরেই মানুষ মেতে উঠেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কমর্কতা (ইউএনও) নাসির উদ্দিন মাহামুদ বলেন, দাসিয়ারছড়ায় দুটি পূজা হচ্ছে। দুই কমিটিকে ৮ টন করে ১৬ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.