দুই মন্ত্রণালয়ের দুই রকম বয়স by মুসতাক আহমদ

প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত বয়স ৫-৭ বছর। এবার সেটিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে আজ একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে তারা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি-বেসরকারি হাই স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে শিশু ভর্তির জন্য ৬ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এটি অনুমোদন পেলে আগামী বছরের ভর্তিতে এ বয়সের বিধান কার্যকর হবে।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির বয়স আগের মতোই ৫-৭ বছরই থাকছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো. আলমগীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কেউ তার ৭ বছরের বেশি বয়সী সন্তানকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করতে চাইলেও আমরা বাধা দেব না।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির বয়সসহ কয়েকটি দিকে পরিবর্তন এনে নতুন ভর্তি নীতিমালা করা হচ্ছে। তবে এটি নতুন কিছু নয়। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির বয়স ৬ বছর বলা হয়েছে। আমরা সেটারই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।’
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আজকের বৈঠকে মূলত ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। এতে তিনটি নতুন দিক কার্যকরের প্রস্তাব রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির বয়স সর্বনিু ৬। তবে তা ৭ বছরের কম হতে হবে। রাজধানীর ৩২টি সরকারি স্কুলের পাশাপাশি এবার ৬৪ জিলা স্কুলকেও বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। রাজধানীর গণভবন স্কুলে গণভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তির বিষয়টি সংরক্ষণের প্রস্তাবও আছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তিতে ‘এলাকা কোটা’ সংযোজনেরও চিন্তাভাবনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘এলাকা কোটা’ চালুর সুপারিশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এ সুপারিশ অনুযায়ী কোনো এলাকার স্কুলে সেই এলাকারই ৪০ ভাগ শিক্ষার্থীকে আগে ভর্তি করতে হবে। বাকি আসনে এলাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা যাবে।
সারা দেশে বর্তমানে ৩৩৩টি সরকারি হাই স্কুল রয়েছে। তবে সব স্কুলে প্রথম শ্রেণী নেই। ৩৩৩টির মধ্যে রাজধানীতে আছে ৩২ হাই স্কুল। এসবের মধ্যে মাত্র ১৪টিতে প্রথম শ্রেণী আছে। অপরদিকে সারা দেশে এমপিওভুক্ত নিুমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল আছে ১৬ হাজার ১০২টি। এসব স্কুলের মধ্যে রাজধানী এবং বড় শহরগুলোর স্কুল ছাড়া অন্যত্র প্রাথমিক স্তর নেই বললেই চলে। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন জানান, সারা দেশে যেসব হাই স্কুলের সঙ্গে প্রাথমিক স্তর আছে, তার সবক’টিতে ভর্তি নিয়ে সংকট নেই। হাতেগোনা শতাধিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সেখানে আসনের তুলনায় বেশি প্রার্থী থাকে। এ কারণে আমরা এসব বিদ্যালয়ের দিকে নজর রাখছি। আমরা চাচ্ছি সেখানে এলাকা কোটা বাস্তবায়ন করে ভর্তির ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা হবে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠকে ভর্তির আবেদন গ্রহণ ও পরীক্ষার সময়সূচি, আবেদন ও ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ইত্যাদি নির্ধারণ করা হবে। মাউশি উপপরিচালক (মাধ্যমিক) মোস্তফা কামাল জানান, বয়স সংশোধন, জেলা পর্যায়ের স্কুলে অনলাইনে ভর্তির বিষয়টি ছাড়া নতুন আর কিছু নেই। বাকি সবকিছুই গত বছরের মতো রাখা হয়েছে।
ঢাকার যে ১৪টি হাই স্কুলে প্রথম শ্রেণী রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমণ্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাই স্কুল, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে আসনসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের মতো।

No comments

Powered by Blogger.