‘বাস ধইর‍্যা লাভ নাই, কিচ্ছু করতে পারব না’ by কমল জোহা খান

বাস থামানোর জন্য পুলিশের দেওয়া সংকেত অমান্য
করলে বাসটির এই চালককে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের
কাছে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: জাহিদুল করিম
‘ভাই, আমাগো বাস ধইর‍্যা লাভ নাই। কিচ্ছু করতে পারব না। খুব বেশি এক দিন, পরেই বাস ছাড়তে হইব। আমাগো বাস রুটের ম্যানেজারের অনেক পাওয়ার।’ আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বনানী ফাঁড়ির সামনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অভিযানে বাস আটকের পর প্রথম আলোর কাছে এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানান বাসচালক রফিকুল ইসলাম।
রফিকুলের ২৭ নম্বর রুটের বাসটি নিউমার্কেট থেকে গাজীপুরে চলাচল করে। শুধু রফিকুলের বাস নয়, এক ঘণ্টার অভিযানে আরও নয়টি বাস আটক করেন ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত। বেশির ভাগ বাসই ২৭ নম্বর রুটের ভিআইপি পরিবহনের। ছিল সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে বলাকা পরিবহন ও একটি কাভার্ড ভ্যান। এসব বাসের কোনোটির ছিল না নম্বর প্লেট, বাতি। আসনগুলো ছিল ভাঙা। রং চটে যাওয়া এবং জানালা ও উইন্ডশিল্ডের কাচ ভাঙা।
তবে বাস আটক হলেও চালক ও তাঁদের সহযোগীরা বেশ খোশমেজাজেই আড্ডা জমিয়ে তোলেন। তাঁদের সাত-আটজন আটক হওয়া একটি বাসের ভেতর থেকে মোবাইল ফোনে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। কেউবা বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাসচালকদের সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছিলেন। বাস চলাচলও কমে যায়।
বাসটির ভেতরে যাওয়ার পর চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নামটা ভালো কইর‍্যা লেখেন। বাস আটকাইয়া কী করব? খুব বেশি হইলে আমাগো কামাই আইজ বন্ধ থাকব। ক্ষতি হইব যাত্রী আর আমাগো। মালিকের তো কিছুই হইব না।’
রাজধানীর বনানী পুলিশ বক্সের সামনে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির কাগজপত্র দেখছেন পুলিশ সদস্যরা। ছবিটি আজ দুপুরে তোলা। ছবি: জাহিদুল করিম
ভিআইপি পরিবহনের একটি বাস আটক করা হলে এর মালিক মনসুর আলী নিজেই ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। মনসুর আলীর দাবি, কেবল রং ঠিক না থাকায় তাঁর বাসটি আটক করা হয়। তিনি বলেন, ‘সব দেখতাছে আমার রুটের ম্যানেজার নাসির আর শাহজাহান মোল্লা। এঁরা রুটও দেখেন, আবার আওয়ামী লীগও করেন।’
মনসুর আলীর বাসের চালক মো. রিপন বলেন, ‘মালিকের লগে দিনে ২৮০০ টাকায় আমরা বাসের চুক্তি করি। বাস আটক করনে আইজ কামাই বন্ধ। কাল আবার অন্য বাস নিয়া চালামু। একদিন পেটে লাথি মারল আর কি!’
নম্বর প্লেটবিহীন আটক একটি বাস । ছবি : জাহিদুল করিম
এদিকে ২৭ নম্বর রুটের ম্যানেজার শাহজাহান মোল্লা নিজের রাজনৈতিক পরিচয় না জানালেও দাবি করেন, সব বাসই ঠিক আছে। তিনি মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার রুটে ৮০টি বাস আছে। এর মধ্যে ৭৫ ভাগ বাসের ফিটনেস আছে।’
বাস আটকের অভিযানে ধকল পোহাতে হয় অসংখ্য যাত্রীকে। এ সময় তাদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। মজিবর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার বিমানবন্দর যাওয়া কথা। এইখানে নামাইছে। এখন যাব কীভাবে? আমার মতো লোকদের তো গাড়ি নাই, টাকাও নাই। ৩০০-৪০০ টাকা খরচের ক্ষমতাও নাই। শুধু বাস আটক করছে, গাড়ি (প্রাইভেট কার) ধরল না কেন?’
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মাদ মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্যক্তিগত গাড়িও আটক করব। যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি দেখছি। তাঁদের ভাড়া ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’ তিনি বলেন, পরিস্থিতি সহনশীল না হওয়া পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটকের অভিযান চলবে।

No comments

Powered by Blogger.