মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল- ব্যর্থতা সরকারের আর খেসারত যাত্রীদের

সড়ক দুর্ঘটনায় এক দিনেই ঝরে গেল ২৯টি প্রাণ। অথচ সড়ক-মহাসড়ক-সেতুই সরকারের উন্নয়নের অন্যতম প্রতীক। বাস্তবে তা বাণিজ্যের উর্বরক্ষেত্র আর ক্ষেত্রবিশেষে গণমৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়ক নিরাপত্তায় নেওয়া অধিকাংশ সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হয় না। মহাসড়কে নছিমন, ভটভটি, অটোরিকশা ইত্যাদি স্বল্পগতির নাজুক পরিবহন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল এক দশক আগে। এখন নতুন করে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা মিলল!
সড়কে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ কমিটি হচ্ছে সড়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা কাউন্সিল। গত দুই বছরে এখানে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করার দায়িত্ব তো এই কাউন্সিলেরই, যার প্রধানও তো সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী! অবশেষে তিনি ২০০৬ সালে নেওয়া ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হুকুম দিলেন। কোন স্বার্থের কাছে নতজানু থাকার কারণে সড়ককে নিরাপদ করার এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না, তা খতিয়ে দেখা হোক। কেন দলীয় চাপে অযোগ্যদের চালকের লাইসেন্স বিতরণ করা হয়? ফিটনেসবিহীন গাড়ি কীভাবে মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করে? দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কগুলোকে বদলানো কেন ঠেকে থাকে?
বিশ্বব্যাংকের জরিপে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বছরে প্রায় ১২ হাজার; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এটা প্রায় ১৮ হাজার। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হকের মতে, শহরাঞ্চলে মোট নিহত ব্যক্তির ৭০ শতাংশই পথচারী, সারা দেশ মিলিয়ে এই হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। এটা নীরব মৃত্যু; এসব খবরের বেশির ভাগই কিন্তু পুলিশের কাছে যায় না। পুলিশ বেশি নজর দেয় দুটি বাহনের মধ্যে সংঘর্ষ হলে, যেখানে মালিক-বিমার প্রশ্ন জড়িত।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপির ১ থেকে ২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা! এটা যেমন জীবনের, তেমনি অর্থনীতিরও রক্তক্ষরণ! সড়ক নিয়ে সরকার দিনে দিনে যত দায়িত্বের দেনা বাড়িয়েছে, তার ঋণ জনগণ আর কত জীবন দিয়ে শোধ করবে?

No comments

Powered by Blogger.