গাছেও টাকা ধরে- বনায়নের ভবিষ্যৎ, উন্নয়নেরও ভবিষ্যৎ

কথায় বলে টাকা কখনো গাছে ধরে না। সত্যিই কি ধরে না? বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের বৃক্ষসম্পদ থেকে নগদ অর্থ আয়ের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে স্বীকার না করে উপায় নেই যে টাকা গাছেও ধরে। বিবিএসের হিসাবে গাছ থেকে মোট দেশজ উৎপাদন অর্থাৎ জিডিপিতে ১২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। অর্থাৎ জিডিপিতে গাছেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
বিবিএসের মতে, দেশে পরিবার পর্যায়ে চারাগাছ লাগানো থেকে কাঠে রূপান্তর করার পর্যায় পর্যন্ত যুক্ত আছেন ৭৪ লাখ ২৬ হাজার নারী-পুরুষ। দেশের ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৮টি পরিবার গাছ লাগিয়ে শুধু যে নিজেদের জীবন বদলে দিয়েছে তা-ই নয়, তারা দেশের অর্থনীতিকেও পুষ্ট করে চলেছে। কৃষক পরিবারগুলো আধুনিক কৃষিবিজ্ঞানের পাঠ না নিয়েই মাঠে শস্য ফলানোর পাশাপাশি বাড়ির চারপাশে ফলদ-বনজ গাছ ও শাকসবজি লাগিয়ে যে অবদান রাখছে, তা বিস্ময়কর। পাশাপাশি দিচ্ছে পরিবেশের সুরক্ষা। কৃষকেরা গাছকে দেখেন বিপদের বন্ধু হিসেবে। কখনো গাছ বিক্রি করে তাঁরা সন্তানের লেখাপড়াসহ সংসারের নানা প্রয়োজন মেটান। সে ক্ষেত্রে কৃষক যাতে গাছের ন্যায্য দাম পান, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে।
গ্রামের পাশাপাশি শহরে, সড়কের ধারে, পাহাড় ও চরাঞ্চলে যাতে বৃক্ষের বিস্তার আরও বাড়ানো যায়, তার জন্য বন বিভাগকে অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কর্মসূচি নিতে হবে। সরকারি বনায়ন কর্মসূচির সঙ্গে বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ের বর্গাচাষিদের প্রণোদনার সঙ্গে জড়িত করতে হবে। বৃক্ষের ভবিষ্যৎ যে উন্নতিরও ভবিষ্যৎ, সেটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রতিবেশী মিয়ানমার কিংবা ভারতে বনভূমি অনেক বেশি। ফলে সেখানে গাছের পরিমাণও বেশি। সেই তুলনায় নদীমাতৃক, কৃষিভিত্তিক ও জনবহুল বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বনায়ন বাড়ানোর সুযোগ কম। কিন্তু আমরা অনায়াসে সামাজিক বনায়ন ও বসতবাড়িতে বাড়তি গাছ লাগিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.