চলছে প্রিয়জনের টানে ঘরে ফেরা

‘বাড়িতে মা-বাবা আছে। ছোট্ট দুটি ভাগনি আছে। ওদের জন্য খুব মন টানে। এবার বাড়ি যেতে চাইনি। কিন্তু ভাগনি দুটি মামা-মামা বলে এমন বলল যে না করতে পারিনি।’ বলছিলেন কায়সার হোসেন নামের একজন যাত্রী। একই পরিবহনের আরেক যাত্রী সৈয়দ সোহাগ রেজা বললেন, ‘ঢাকায় থাকতে পারি না। মনটা শুধু বাড়ির দিকে টানে। বলতে পারেন ঘরের টানে ঘরে ফেরা।’ কথাগুলো দুই বাসযাত্রীর।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেল স্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় দেখা গেলেও ঘরমু​খী যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না গাবতলী বাস টার্মিনাল আর কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে। দুপুর একটার দিকে কল্যাণপুরে কথা হয় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের দুই যাত্রীর সঙ্গে। যাঁদের চোখেমুখে চিকচিক করছিল বাড়ি ফেরার আনন্দ। তাঁদের ভাষ্য, বা​সটি যথাসময়ে কাউন্টারের সামনে এলেও ছাড়তে দেরি করেছে ১০/১৫ মিনিট।
গাবতলীতে দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসে চড়েছেন আশরাফুল ইসলাম। তাঁর গন্তব্য রংপুর। তিনি জানালেন, যথা সময়ে তাঁদের বাস এসেছে। রাজধানীর পথঘাট মোটামুটি ফাঁকা থাকায় তাঁদের আসতেও কোনো সমস্যা হয়নি।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ঝুঁকি নিয়ে হলেও ঘরমুখো মানুষ। ছবিটি ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা
তবে টিকিট না কেটে বেশ হতাশ মনে হলো সন্তোষ চন্দ্র নামের একজন পোশাক শ্রমিকের। তিনি থাকেন গাজীপুরে। সময়ের অভাবে আগাম টিকিট কাটতে পারেননি। এখন ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি বলেন, অন্য ধর্মের হলেও ঈদে গার্মেন্টস ছুটি। তাই তিনি বাড়ি যাচ্ছেন।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক মোশাররেফ হুসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দু-এক দিন যানজট থাকলেও এখন রাস্তা ক্লিয়ার। গাড়ির কোনো লেট নেই।’
গাবতলীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় খোলা হয়েছে র‍্যাব ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখানে দায়িত্বরত র‍্যাবের উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এখানে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত চারটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’
এদিকে, কমলাপুর রেল স্টেশনে হজরত আলী নামের একজন যাত্রী বললেন, ‘আমি যেতে চাইনি। কিন্তু শালির বিয়ে। তাই না যেয়ে উপায় নেই। বাড়িতে যাচ্ছি তো, ভীষণ ভালো লাগছে।’ স্টেশনে ২০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রেলের আগাম টিকিট সংগ্রহ করেছেন বলে জানালেন বেসরকারি একটি টেলিভিশনের চাকরিজীবী এই যাত্রী।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ঝুঁকি নিয়ে হলেও ঘরমুখো মানুষ। ছবিটি ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তোলা। ছবি: ফোকাস বাংলা
আনোয়ার হোসেন গাজী নামের আরেকজন যাত্রী বললেন, ‘বাসের টিকিট পাইনি, তাই ট্রেনে যাচ্ছি। যাতে ভালোয় ভালোয় পৌঁছাই- এই দোয়া করবেন।’ কাকলী আক্তার নামের একজন যাত্রী নিজের পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে বলেন, ট্রেন যত সামনের দিকে এগোচ্ছে ততই যাত্রী বাড়ছে। আস্তে আস্তে তাঁদের কামরায় সৃষ্টি হচ্ছে গাদাগাদি অবস্থা। বিশেষ করে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে যাত্রীরা কেবল কামরায় নয়, উঠে গেছেন ছাদেও। কাউকে আবার ট্রেনের কামরার পাদানিতে ঝুলতেও দেখা গেছে।
বিমানবন্দর রেল স্টেশনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, ভোর থেকেই এখানে ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড়। ট্রেন আসতে না আসতেই হুড়মুড় করে উঠছেন সবাই। এতে কয়েকজন আঘাত পেয়েছেন বলেও জানালেন তাঁরা।
অন্যদিকে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী যাত্রীদের ভিড় থাকলেও দুর্ভোগের তেমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া বিরূপ থাকায় কোনো লঞ্চের ছাদেই যাত্রীদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.