মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে পরমাণু চুক্তি: ওবামা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সমালোচকরা ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ৯৯ শতাংশ এবং অধিকাংশ পরমাণু বিশেষজ্ঞদের’ সমর্থনের মুখে বিব্রতকর ও বেকায়দা অবস্থায় রয়েছেন। ইরানের সঙ্গে বিদ্যমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে পরমাণু চুক্তির চেয়ে ভালো কোন বিকল্প সমাধান বের করার ব্যাপারে নিন্দুক ও সমালোচকদের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন ওবামা। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধের ঝুঁকি এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় পরমাণু চুক্তি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি সংবাদ-সম্মেলনে অংশ নেয়ার সময় কংগ্রেসে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকানদের ইঙ্গিত করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন ওবামা। এদিকে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহে পরমাণু চুক্তি সমর্থন বা অনুমোদনে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও অনলাইন বিবিসি। সেখানে রিপাবলিকানরা পরমাণু চুক্তিটি উল্টে দিতে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা করবেন, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন আইনপ্রণেতারা পরমাণু চুক্তি পর্যালোচনার জন্য ৬০ দিন সময় পাচ্ছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ বলেন, মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি ‘রাজনীতি নয়, প্রকৃত ঘটনার নিরীখে’ পরমাণু চুক্তিটি মূল্যায়নের আহ্বান জানান।
ওবামা বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের ৯৯ শতাংশ এবং পরমাণু বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই যদি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তারা বলেন, এটা ইরানের পরমাণু বোমা তৈরি প্রতিহত করবে। রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যদি ভিন্নমত পোষণ করে বলেন যে, এটা ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরির পথ থেকে সরিয়ে আনবে না আর যদি সরিয়েও আনে, সেটা হবে ক্ষণস্থায়ী। সেক্ষেত্রে আপনার কাছে কোন বিকল্প সামাধান থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি বিকল্প পথই খোলা ছিল। ওবামা বলেন, হয় ইস্যুটি ‘কূটনৈতিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতো বা বল প্রয়োগের মাধ্যমেও তা সমাধান করা যেতো। যুদ্ধের মাধ্যমে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি ব্যতীত বিশ্ব সম্প্রদায় ‘মধ্যপ্রাচ্যে আরও বেশি যুদ্ধের’ ঝুঁকিতে পড়তো। ভিয়েনায় বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর ৬ রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহারের শর্তে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি বহুলাংশে হ্রাস করবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বর মাস থেকে চুক্তিটি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ইরানের জন্য রাজনৈতিক বিজয়। তেহরান আর কখনোই আন্তর্জাতিক হুমকি হিসেবে পরিগণিত হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, কেউ বলতে পারে না যে, ইরান আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বলেন, চুক্তিটি বৈধ, কৌশলগত এবং ইরানের রাজনৈতিক বিজয়। এটি একটি অর্জন, যার ফলে ইরানকে আর কখনও বিশ্বের হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে না। অন্যদিকে, এ চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী একে ‘অতি আশ্চর্যজনক ঐতিহাসিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে ওবামা আশা প্রকাশ করেন যে, এ চুক্তি ইরানকে ভিন্ন আচরণ করতে উৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কাছ থেকে অধিকতর সহযোগিতা চাইবে। পরমাণু চুক্তিটি সম্পাদনের পর থেকেই রিপাবলিকানরা ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণাত্মক মন্তব্য শাণিয়ে চলেছেন। ওবামাও তার জবাবটা দিচ্ছেন অকাট্য যুক্তি দিয়েই।

No comments

Powered by Blogger.