উৎসুক চোখ আজ খুঁজবে এক ফালি বাঁকা চাঁদ

আকাশের কোণে এক ফালি বাঁকা চাঁদ খুঁজতে আজ শুক্রবার বিকেল থেকেই উৎসুক হয়ে উঠবে লাখো মানুষের দৃষ্টি। প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে দেখা পেলে। আনন্দধারা বয়ে যাবে ঘরে ঘরে। টিভি-বেতারে ভেসে আসবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই চিরচেনা গানের সুর ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ...’। পাড়া-মহল্লার মসজিদ থেকে ভেসে আসবে ‘ঈদ মোবারক’ ধ্বনি।
এ বছর পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা শুরু হয়েছিল শুক্রবার থেকে। আজ যদি শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠে, তবে শুক্রবারেই মাহে রমজানের সমাপ্তি। ঈদুল ফিতর হবে শনিবার। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল ফিতর নিয়ে এই আনন্দময় অনিশ্চয়তা প্রতিবছরই থেকে যায়। আজ যদি চাঁদ না-ও দেখা যায়, তবে তাতেও আক্ষেপের কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে ৩০টি রোজা পূর্ণ হবে। ঈদ হবে রোববার।
গত এক মাস ছিল সংযমের। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কৃপা লাভের মধ্য দিয়ে বিগত জীবনের পাপরাশি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশায় রোজা পালন করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। কোরআন পাঠ করেছেন, দান খয়রাত করেছেন, মগ্ন থেকেছেন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে। মাসব্যাপী এই সিয়াম সাধনার পরিসমাপ্তি ঘটবে ঈদের আনন্দের মধ্য দিয়ে।
ঈদের দিনটি ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফনির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায়। এ দিক থেকে ঈদ কেবল আনন্দের বার্তাই নিয়ে আসে না, ইসলামের সাম্যের এক বড় পরিচয় উদ্ভাসিত হয় এই আনন্দঘন উৎসবের মধ্য দিয়ে।
এবারের ঈদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে টাইগার ক্রিকেটারদের দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক এক দিনের ম্যাচের সিরিজ বিজয়। পাকিস্তান, ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রায় তিন মাস ধরে দেশের মানুষকে আনন্দে-উচ্ছ্বাসে উৎফুল্ল করে রেখেছেন ক্রিকেটাররা। বাঘের গর্জন এখন সত্যিকারের ভীতির সঞ্চার করেছে ক্রিকেট বিশ্বে। জাতিকে গর্বিত করেছেন তাঁরা। সেই আনন্দ-গর্বের রেশ থাকবে ঈদের উৎসবেও।
এদিকে ঈদের কেনাকাটার পর্ব ইতিমধ্যে শেষ করে ফেলেছেন প্রায় সবাই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়িতেও যাত্রা শুরু হয়েছে গত বুধবার থকেই। আজ চাঁদ দেখা গেলে রাত থেকেই ঘরে ঘরে শুরু হবে সাধ্যমতো উপাদেয় খাবার তৈরির আয়োজন। ‘সেমাইয়ের ঈদ’ নামে প্রচলিত এই ঈদে নানা রকম সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, পোলাও, কোর্মাসহ সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। বিশেষ আয়োজন থেকে বাদ যাবে না রোগী, বন্দী বা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কর্মীরাও। হাসপাতাল, এতিমখানা ও বন্দীদের জন্য কারাগারগুলোতে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে প্রথাগতভাবে। সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রেও থাকবে বিশেষ খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা।
ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। আর এই আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে আছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
বাণী: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এসব বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, ঈদুল ফিতর সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন গড়ে তোলে। সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ঈদ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির অনুপম শিক্ষা দেয়। বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, পবিত্র ঈদ মানুষের মনের সকল হিংসা-বিদ্বেষ, সংকীর্ণতা, কুটিলতা পরিহার করে অনাবিল আনন্দ, শান্তি ও সম্প্রীতির বারতা বয়ে আনে। বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, এই ঈদ সামাজিক কদর্যতা, অন্যায় ও নিষ্ঠুর অসাম্যকে অতিক্রম করে এক নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে।

No comments

Powered by Blogger.