ভারতের মন্ত্রিসভায় সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন by পরিতোষ পাল

বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের স্বার্থে এবং অনুপ্রবেশ পুরোপুরি বন্ধের তাগিদে কংগ্রেসের আপত্তি মেনে পূর্ণাঙ্গ আকারেই মূল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী  বিলটি আগামী ৭ বা ৮ই মে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পেশ করা হতে পারে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কেবিনেট কমিটির বৈঠকে বিলটি অনুমোদিত হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে আসামকে বাদ দিয়ে সীমান্ত চুক্তি বিল পেশ করার সরকারি সিদ্ধান্তে কংগ্রেস প্রবল আপত্তি করার ফলে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে আসরে নামতে হয়। আসামের বিজেপি নেতাদের বোঝানোর দায়িত্ব নিয়ে অমিত শাহ গত সোমবার রাতেই দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন আসামের বিজেপি নেতাদের। গভীর রাত পর্যন্ত দিল্লিতে অমিত শাহ’র বাড়িতে বৈঠকে বসেন আসাম রাজ্য বিজেপির সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, সংসদ সদস্য কামাখ্যাপ্রসাদ তাসা, রমেন ডেকা, আর পি শর্মা, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু ও  আসামের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা মহেন্দ্র সিংহ। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের স্বার্থেই আসামের বিজেপি নেতাদের চুক্তিটি পূর্ণাঙ্গ আকারে মেনে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। সেই সঙ্গে বৈঠকে জানানো হয়, সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করতে চুক্তি সম্পাদন করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জমি (৭০০০ বিঘা) পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে যাবে। তারা কোন আপত্তি জানায় নি। আসামের চেয়ে বেশি জমি যাবে মেঘালয় ও ত্রিপুরারও। আসাম থেকে ২৬৭ একর জমি বাংলাদেশ পেলেও আসাম উল্টো দিকে ৫০০ একর জমি পাবে। তাই আসামের ক্ষতি নেই। এর পরেই বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, কংগ্রেস ও আসামের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে আসামকে বাদ রাখা হচ্ছে না। বৈঠক শেষে আসামের বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও সোনিয়া গান্ধীর আসামবিরোধী অবস্থানের কারণে স্থলসীমান্ত চুক্তি থেকে আসামের নাম বাদ রাখা হচ্ছে না। এই চুক্তি করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাই এই বিল পাস করাতে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। অথচ রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতাই নেই সরকারের। এই পরিস্থিতিতে আসামকে চুক্তির আওতায় আনতে হচ্ছে বলে জানান সিদ্ধার্থবাবু। শুধু রাজ্যসভাই নয়, লোকসভাতেও সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাস করাতে লোকসভায় সংশোধনী পাস করাতে অন্তত ৩৬৮ জন সংসদ সদস্যের সম্মতি লাগবে। কিন্তু, মোদি সরকারের শক্তি সেখানে ৩৩৪। তাই কংগ্রেসের আপত্তি মেনে নিতে হয়েছে সরকারকে। সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করতে ভারতের সংবিধানে সংশোধন করার জন্য গত ইউপিএ সরকারের আমলে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এ সংক্রান্ত ১১৯তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা হলে পরে তা সংসদের পররাষ্ট্রবিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যায়। সেখানে পরবর্তী সময়ে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস সহ সব দলই বিলটি দ্রুত সংসদে পেশ করার সুপারিশ করে। এই বিলটি গৃহীত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬১টি ছিটমহলের বিনিময় যেমন হবে তেমনি অপদখলীয় জমির জটিলতাও দূর হবে। তাই তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মত পাল্টে সীমান্ত বিলে সম্মতি দেয়ার পরে বিলটি পাস করাতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু আসাম বিজেপির নেতারা আসামে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে আসামকে বাদ রেখে চুক্তি করার দাবি তুলেছিল। সরকার তা মেনে নিলেও আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর আপত্তির ফলে শেষপর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বিলটিই সংসদে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি হলে আসামের যে জমি বাংলাদেশ পাবে, তার চেয়ে বেশি জমি পাবে আসাম। তাই চুক্তি থেকে বাদ গেলে আসামেরই ক্ষতি।
বাংলাদেশ নিয়ে মোদিকে লেখা গগৈর চিঠিতে আগুন
বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রতিবাদ জানাতে গতকাল গৌহাটিতে আসামের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর  একটি চিঠির কপিতে অগ্নিসংযোগ করেছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আসু।
ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কয়েক দিন আগে লেখা ওই চিঠিতে তরুণ  গগৈ স্থল সীমান্ত সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন বিলে আসামকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে ব্যাখ্যা করেছিলেন।
এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার খবরে বলা হয়, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী গত ১লা মে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে জানিয়েছেন যে, আসামকে বাদ দিয়ে সংবিধান সংশোধন বিল আনা হলে তারা বিরোধিতা করবেন। 
উল্লেখ্য, আসাম থেকে তথাকথিত অবৈধ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বহিষ্কারের নির্দিষ্ট দাবিতেই আশির দশকে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আসু গঠিত হয়েছিল। টানা ছয় বছরের আন্দোলন শেষে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সঙ্গে ‘বাংলাদেশী’ বিতাড়ন বিষয়ে ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তি করেছিল। এটি এখনও কার্যকর ও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে ওই চুক্তির পরে অসম গণপরিষদ অগপ নামে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে। এবং অগপ ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দুবার সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।
আসু গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, কংগ্রেস নেতা গগৈ আসাম বিরোধী যে অবস্থান নিয়েছেন তাতে এটা পরিষ্কার যে, তিনি অবৈধ বাংলাদেশীদের কাছ থেকে ভোট পাওয়ার আশায় আসামের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন। আর সেকারণে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে পুনরায় চিঠি দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.