যুক্তরাষ্ট্রের চোখে জামায়াত হবে ‘বোকো হারাম’? by মিজানুর রহমান খান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কের কি অবসান ঘটতে যাচ্ছে? মনে হচ্ছে বিএনপিকে তার ‘কৌশল-মিত্র’ জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে বিতর্কিত কৌশলগত সম্পর্ক ছিল, তার দোহাই দিয়ে বিএনপি এতকাল যতটা সহজে দলটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে চলছিল, এখন তাদের তা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। জামায়াতকে বাদ দিয়ে জোট পুনর্গঠন করা উচিত, কিন্তু তা করতে গেলে তারেক রহমানকেও মাইনাস করার ঝুঁকি নিতে হবে।
একাত্তরে নিক্সন-কিসিঞ্জারের অনুসরণ করা বিতর্কিত বাংলাদেশ নীতির একমাত্র বাংলাদেশি সমর্থক জামায়াতই এখনো রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হিসেবে টিকে আছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বিচার–প্রক্রিয়ার মান নিয়ে উচ্চকিত থাকলেও ধীরে ধীরে অবস্থান বদল করে।
ইইউ পার্লামেন্টের সুপারিশের পরে মার্কিন কংগ্রেসের গত ৩০ এপ্রিলের শুনানিতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ প্রথম উঠল। গত বছরের আগস্টে যুদ্ধাপরাধসংক্রান্ত মার্কিন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট লার্জ স্টিফেন র্যা প তাঁর পঞ্চম সফরে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ট্রাইব্যুনালের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি ও বিচারকদের সাহসের প্রশংসা করেন। বিএনপি-জামায়াত হয়তো ভেবেছে, র্যা প বুঝি উভয় দলের কাঠগড়ায় তোলা নেতাদের উদ্ধার করতে এসেছেন। র্যা প স্মরণ করেছিলেন আর্চার কেন্ট ব্লাডকে, এর চার বছর পরে প্রথম আলোয় এসে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট তাঁকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, যাঁকে আমি বলি আমাদের রণাঙ্গনের একমাত্র মার্কিন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা (কারণ, একাত্তরে ঢাকায় মার্কিন কনসাল ব্লাড তাঁর বাড়ির বাগানে মাটির নিচে বিদ্রোহী বাঙালি পুলিশের রাইফেল লুকিয়ে রেখেছিলেন)। ঢাকা থেকে ড্যান মজীনার ধূসর বিদায়ের পরে বার্নিকাট রীতিমতো ঢাকায় হাতে করে বয়ে আনেন নিক্সন-কিসিঞ্জারের নীতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশের স্মৃতিধন্য ব্লাডের সেই বিখ্যাত টেলিগ্রাম, যা তিনি জাতীয় জাদুঘরে দান করেছেন।
বিএনপি আমেরিকার ২০০১ সালের ৯/১১-এর মাহাত্ম্য বুঝতে পারলে হয়তো নিজের জন্য ২০০৭ সালের ১/১১ এড়াতে পারত। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও বিএনপি জামায়াতে আটকে আছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এককালের শিথিল জামায়াতি দোস্তিটাই তার পক্ষে আজও আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহারের লোভটা সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে।
তাই বিএনপি নেত্রী কিছুদিন আগেও তার প্রথম সরকারকে নাকানিচুবানি খাওয়াতে জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গাঁটছড়া বাধার পুরোনো ও আত্মঘাতী কাসুন্দিটাই বিরক্তিকরভাবে ঘেঁটেছেন। কিন্তু তিনি হয়তো এখনো ভাবছেন না, শহীদজননী জাহানারা ইমামের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি নেওয়া সেই শেখ হাসিনা আর আজকের হাসিনা এক নন। সেই সময় আর টুইন টাওয়ার পরবর্তী আজকের সময়ের মধ্যে বিরাট তফাত। এখন প্রতি পদে পদে ভারতকেও সমঝে চলতে হয় চীনা পীড়াতাড়িত যুক্তরাষ্ট্রকে।
টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরে বিশ্বের নিরাপত্তা ধারণা রাতারাতি বদলে গিয়েছিল। কিন্তু বিএনপি নাচতে নাচতে জামায়াতকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিল। এরপর জামায়াতি জোশে জেএমবি সারা দেশে বোমা ফাটালেও তাদের হুঁশ হলো না, ঘুম ভাঙতে খুব দেরি হলো কিংবা ভাঙলই না।
ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউর বার্টিল লিন্টনার ছিলেন হুইসেল ব্লোয়ার। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির পরিবর্তে তারা লিন্টনারকেই কুচক্রী চিহ্নিত করে। রাজশাহীতে বাংলা ভাইকে দেওয়া হয় গণসংবর্ধনা, আর ঢাকায় চলে তালেবানি জয়গান, আর রাতের আঁধারে ঘটে ১০ ট্রাক অস্ত্রের পারাপার। এরপর আফগানিস্তান ও ইরাক উপাখ্যান ঘটেছে, হালে আইএসের উত্থান ঘটেছে। কিন্তু বিএনপি ও তার নেত্রী ধনুক ভাঙা পণ করেই আছেন। জগৎ উল্টে যায় যাবে, কিন্তু তাদের জামায়াতপ্রীতি অবিনশ্বর, উল্টো তারা হেফাজতপ্রীতি দেখিয়ে আরও সর্বনাশ করেছে। এই সেদিন বিএনপি নেত্রী একটু নরম সুরে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে মতাদর্শগত নয়, কৌশলগত ঐক্য চলছে। বিএনপি-সমর্থকদের চোখেমুখে সে কী তৃপ্তির ছাপ, যেন খালেদা জিয়া মহা একটা চাল দিয়ে ফেলেছেন।
ইতিমধ্যে কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি হয়েছে। ইইউ পার্লামেন্টে জামায়াতের অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে প্রস্তাব পাস হওয়ার পরে এবারে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে কথাটা উঠল। যদিও এটা কোনো সংসদীয় প্রস্তাব নয়, তদুপরি মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন রিলেশনস কমিটিতে যাঁদের ডাকা হলো, তাঁরা জামায়াত সম্পর্কে কম-বেশি নেতিবাচক ধারণাই স্পষ্ট করেছেন।
হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের পরিচালক জে কানসারাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকাটাই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বহুত্ববাদ ও হিন্দুত্ববাদ প্রচারক এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধের অনুকূলে প্রচার চালাচ্ছে। তারা নির্দিষ্টভাবে জামায়াত-শিবিরকে এফটিও এবং ইও ১৩২৪৪-এর আওতায় ফেলার প্রস্তাব করেছে। এফটিও মানে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১৯ ধারার অধীনে ‘ফরেন টেররিস্ট অর্গানাইজেশনস’, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেন। জামায়াত-শিবিরকে এফটিও হলে তার নেতা–কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হবেন, জামায়াতের মার্কিন সদস্যরা সে দেশ থেকে অপসারিত হবেন।
আর ইও ১৩২৪৪-এর আওতায় এক্সিকিউটিভ অর্ডারে উল্লেখ করা বিধিনিষেধের মধ্যে জামায়াতের ব্যক্তি বা সংগঠন পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ মার্কিন এখতিয়ারে আসা তাদের সব অর্থ ও সম্পদ আটকে দিতে পারবে। এটা করতে হলে দেখাতে হবে যে জামায়াত-শিবির মার্কিন বিদেশনীতির জন্য ক্ষতিকর কাজে লিপ্ত। নাইজেরিয়ার বোকো হারামকে এই দুটো ধারাতেই নিষিদ্ধ করা হয়। কানসারা ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশবিষয়ক শুনানিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়কে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করতে হবে।
আমেরিকান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মিস লিসা কার্টিস দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে সিএনএন বিবিসির পরিচিত ভাষ্যকার। হেরিটেজে যোগদানের আগে তিনি মার্কিন আইনসভায় দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে ব্যাপকভাবে যুক্ত থেকেছেন। নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে মার্কিন পলিটিক্যাল অফিসার ছিলেন আর সিআইএ-তে থাকতেও এই অঞ্চলের ওপর কাজ করেছেন। কংগ্রেস শুনানিতে লিসা কার্টিজ বলেন, ‘জামায়াতের সহিংস রেকর্ড বিবেচনায় নিলে তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্বেগের যথার্থতা আছে। যদিও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর তারা ক্রাক ডাউন চালালে যে অসন্তোষ তৈরি হবে, সেই সুযোগে জামায়াত আবারও সহিংস প্রবণতাকে সংগঠিত করার সুযোগ পাবে, আর তখন সমস্যা আরও খারাপ দিকে মোড় নেবে।’ লিসার মতে, ‘জামায়াতের গ্রামে ছোট ভিত্তি আছে। তাদের যুব সংগঠনের জঙ্গিত্ব সুবিদিত। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তারা সহিংস উসকানি দিয়ে থাকে। জামায়াত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাঁর বক্তব্যে পেট্রলবোমা হামলার কিছু ক্ষেত্রে সরকারদলীয়দের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রতি ইঙ্গিত করলেও সাফ বলেছেন, অধিকাংশ হামলার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত জড়িত। লক্ষণীয় যে ২০১৩ সালের নভেম্বরের মার্কিন কংগ্রেসের একই ধরনের শুনানিতে জামায়াত প্রসঙ্গ একেবারেই আলোচনায় আসেনি।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই সরকার হয়তো সাতপাঁচ ভেবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। স্টিফেন র‌্যাপ অবশ্য গত আগস্টে তাঁর সবশেষ সফরে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের বিরোধিতা করেছিলেন। জামায়াতের বিচার ও সমাজে সংগঠন হিসেবে তার পুনর্বাসন খুবই যে জটিলতাপূর্ণ, তাতে সন্দেহ নেই।
গত মার্চে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যখন যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচারের প্রশ্নটি তুলি, তখন আর্জেন্টাইন বিশেষজ্ঞ দানিয়েল ফেইরেস্তেইন অবাক হন। তিনি স্পষ্ট ইঙ্গিত করেন যে সংগঠন নিষিদ্ধ করা হলে তারা তো নাম বদলে নেবে, তাহলে তাতে লাভ কী হবে। বাহাত্তরের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদও আর আগের মতো নেই।
উইকিলিকস নথিতে প্রমাণ মেলে, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক পরিষ্কার। তবে এখন তাতে চিড় ধরলে অবাক হব না। আবার কংগ্রেসের শুনানিটাই চূড়ান্ত বার্তা নাও হতে পারে। এর আগে যখন মার্কিন তদন্তের ভিত্তিতে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জামায়াতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলাম, তখন জামায়াত প্রতিবাদ করল। তাদের ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ১৪ ডিসেম্বরে প্রথম আলোর নিবন্ধের নিন্দা করলেন। কিন্তু তারা মার্কিন দূতাবাসের তদন্তকে মিথ্যা বলে মার্কিন সরকারের নিন্দা করেনি।
২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি মার্কিন দূতাবাসের একটি গোপন তারবার্তা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে জামায়াত বলেছিল, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য তাদের মতো করে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এটা এখন চার মূলনীতির সঙ্গে যায় না। আসলে জামায়াতের দরকার আত্মজিজ্ঞাসা। বিএনপি তাকে ‘মুক্তি’ দিলে বা নিজ থেকে নিলে এ কাজটা হয়তো তার জন্য সহজ হতে পারে। কামারুজ্জামানের চিঠিতে যে সংস্কারের নির্দেশনা আছে, বিএনপির অন্তত উচিত সেটা মেনে নেওয়া বা ফয়সালা করে নেওয়া।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাইদুল ইসলামের লেখা ও কেমব্রিজ প্রকাশিত নতুন বইয়ে (লিমিটস অব ইসলামিজম, জামায়াত-ই-ইসলামী ইন কনটেম্পরারি ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ, ২০১৫) বাংলাদেশ ও ভারতের জামায়াতের একটি তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। এই বইয়ে বিএনপি ও তার নেত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, সেটা বড়ই কৌতূহলোদ্দীপক। এতে অনুমান করা হয়েছে, রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার দিন ফুরালে বিএনপিরও দিন ফুরাবে। তখন জামায়াত আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হবে। এর কারণ তার নামের শেষে ইসলাম থাকার কারণে অতীত ভুলে আমজনতা তাদের পেছনেই থাকবে। বর্তমানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান মনে করেন, ‘মিসরের ইখওয়ানের (মুসলিম ব্রাদারহুড) মতো জামায়াত হয়তো একাত্তরে কৌশলগত ভুল করেছে।’ তাঁর মতে, ‘খালেদা জিয়ার পরে বিএনপি ভেঙে যাওয়ার প্রকৃত সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বিএনপি সাফল্যের সঙ্গে দুর্বল হলে ভারত ও আওয়ামী লীগবিরোধী একমাত্র মঞ্চ হবে জামায়াত, সে ক্ষেত্রে বর্তমানে জামায়াতের যত দুর্বলতা আছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’ (পৃ. ৩০৩)
মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে লিসা কার্টিজ বাংলাদেশ সংকট মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ থাকার সুপারিশ করেছেন। এর অর্থ ভারতকে তারা চটাবে না। এখন জামায়াত ‘বোকো হারামের’ ভাগ্য বরণ করে কি না, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। গতকালের এএফপির খবর, অভিজিৎ হত্যার দায় আল–কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ চ্যাপ্টার স্বীকার করেছে। এ ঘটনা ওবামা প্রশাসনের জামায়াতবিরোধী অবস্থান গ্রহণকে তীব্রতা দিতে পারে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
mrkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.