উৎকণ্ঠায় বিএনপির কারারুদ্ধ নেতাদের পরিবার

মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। দীর্ঘ চার মাস ধরে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে অমানবিক কষ্ট ভোগ করছেন বীরবিক্রম খেতাবধারী এই মুক্তিযোদ্ধা। ঘুম ও হাঁটা-চলার অসুবিধার কারণে তার গুলিবিদ্ধ পা অবশ হয়ে গেছে। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণে ওজন কমে গেছে ৮ কেজি। একই অবস্থা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, মোসাদ্দেক আলী ফালু, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ বিরোধী জোটের ১৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর। কেউ বা ডায়াবেটিস, হার্ট আবার কেউ বা উচ্চরক্ত চাপসহ নানা জটিল ব্যাধিতে ভোগছেন। সম্প্রতি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে কারারুদ্ধ নেতাদের পরিবারের মধ্যে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন- গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বয়সের ভারে ন্যূব্জ এসব নেতার। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে কারারুদ্ধ নেতাদের চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
গত ৬ই জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জটিল নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত এই বিএনপির শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ৭৯টি রাজনৈতিক মামলা। মস্তিষ্কের ধমনি ও হার্টে ব্লক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন রোগে ভোগছেন তিনি। মির্জা আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, আমার স্বামীর মস্তিষ্কের ধমনিতে দুটি ব্লক ধরা পড়েছে। যার ৮০ ভাগই অকেজো বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। যে কোন সময় ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণে তার ১৫ কেজি ওজন কমে গেছে। দীর্ঘ প্রায় এক বছরের বেশি ধরে কারাগারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনিও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে ভোগছেন। ২০১৪ সালের ১২ই মার্চ গ্রেপ্তারের পর অসুস্থতার জন্য বেশ কয়েকবার কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-১এ রয়েছেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. মারুফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, গত শনিবার কারাগারে বাবাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি আগে থেকেই  ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও কিনডির সমস্যাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর কয়েকদফায় বেশ কয়েকদিন  রিমান্ডে পাঠানো হয়। এরপর তার হার্টের সমস্যাটা বেড়ে যায়। ফলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। ওই হাসপাতালে তিনি প্রায় দুই মাসের মতো চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বলেন, কারাগারে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও সব ওষুধপত্র আমরা নিয়মিত দিয়ে আসি। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণেই প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ব্লাড প্রেশার, আলচার ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন দীর্ঘ ৫ মাসের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গত ২৬শে ডিসেম্বর গ্রেপ্তারের পর তাকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। বেশ কয়েকটি জটিল রোগের জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। গয়েশ্বর রায়ের কন্যা অপর্ণা রায় বলেন, বাবার শরীরটা ভাল নেই। গত সপ্তাহে কারাগারে বাবাকে দেখে এসেছি। তাকে ওষুধ দিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, বাবা গ্যাস্ট্রিক, আলচার, ব্লাড প্রেশার, হার্টের সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। তিনি রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালের প্রফেসর মুজিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে নিয়মিত চিকিৎসা করান। সবগুলো রোগের জন্য নিয়মিত তাকে ওষুধ খেতে হয়। ওষুধগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল। গত সপ্তাহে দিয়ে এসেছি। তবে কারাগারে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তিনি। কারাগারে চরম অমানবিক কষ্ট ভোগ করছেন শমসের মবিন চৌধুরী। ৮ই জানুয়ারি গ্রেপ্তারের পর কয়েকদফা রিমান্ডও ভোগ করেন সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব। শমসের মবিনের স্ত্রী শাহেদা ইয়াসমিন মানবজমিনকে বলেন, গত সোমবার কারাগারে উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। যুদ্ধের সময় যে পায়ে গুলি লেগেছিল সেটা অবশ হয়ে গেছে। কারণ তিনি গত চার মাস ধরে যে বিছানায় শুচ্ছেন সেটা তো তার জন্য সঠিক বিছানা নয়। এছাড়া তার পায়ের জুতা যেহেতু ঠিক নয়, লাঠির ওপর ভর করে প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা হাঁটতে হচ্ছে। ফলে পায়ের ওপর একটা চাপ পড়ে। খাওয়া-দাওয়ার অনিয়মের কারণে তার ৮ কেজি ওপরে ওজন কমে গেছে। এখন তিনি পায়ের জন্যই বেশি কষ্ট করছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি কারাগারে ১৭ দিন বিদ্যুৎ ছিল না। ওই সময় গরমে তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে তার হার্ট বা অন্য কোন রোগ নেই। তবে এখন যে পরিমাণ গরম পড়েছে তাতে এই বয়সে তার কখন যে কি হয় সেটা নিয়েই বেশি চিন্তা করছি। তিনি বলেন, ব্যাংককের সামিটি ব্যাজ হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন শমসের মবিন। এখন পায়ের যে অবস্থা তাকে অতিদ্রুত বিদেশে নিতে হবে। আশা করি সরকার সেই সুযোগ দেবে।  
ডায়াবেটিস, হার্ট ও ব্লাড প্রেশারের সমস্যায় ভুগছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু। গত ১১ই জানুয়ারির গ্রেপ্তারের পাঁচদফায় বেশ কয়েকদিন রিমান্ড ভোগ করেন। এরপর থেকে তিনিও শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন। শামসুজ্জামান দুদুর ছোটভাই ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কয়েকদিন আগে ভাইকে কারাগারে দেখে এসেছি। তার শারীরিক অবস্থা তেমন ভাল নয়। তিনি ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। এসব রোগের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপ করাতে হয়। কিন্তু কারাগারে সেই সুবিধা পাচ্ছেন না তিনি। আশা করি কারাকর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ৩রা জানুয়ারি রাতে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে অসুস্থ অবস্থায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার পর ৩০শে জানুয়ারি রাতে ফের গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। এরপর রেকর্ড টানা ২৭ দিন রিমান্ড ভোগ করেন স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সাবেক এই ছাত্রনেতা। তিনিও ডায়াবেটিস, হার্ট ও পেটের সমস্যায় ভুগছেন। রিজভী আহমেদের সহধর্মিণী আঞ্জুমান আরা বেগম মানবজমিনকে বলেন, গত সপ্তাহে তার সঙ্গে দেখা করেছি। ওর শরীরটা বেশি ভাল নেই। খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধার জন্য প্রায়ই তিনি পেটের সমস্যায় ভুগেন। তিনি বলেন, রিজভী একটু চাপা স্বভাবের। শত সমস্যায় ভুগলেও মুখ ফুটে কিছু বলে না। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তার হাতে ও পায়ে রড লাগানো আছে। এছাড়া গ্রেপ্তারের পর ১২ দফায় এক মাসেরও বেশি সময় রিমান্ড ভোগ করেন তিনি। রিমান্ড চলাকালীনও তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। ওই সময় তার ডায়াবেটিসটা বেড়ে গিয়েছিল।  এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর,  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, মোসাদ্দেক আলী ফালু, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, মাহবুবুল হক নান্নু, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল মতিন, হবিগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ জিকে গউছসহ বিরোধী জোটের প্রায় ১৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মী।
চিকিৎসা না দিয়ে নেতাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে: বিএনপি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সুচিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। সুচিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে নেতাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ড. রিপন বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- কারারুদ্ধ বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বারবার রিমান্ডে নেয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। নেতাদের সুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হলেও এদের কেউ  কেউ লাশ হয়ে ফিরছেন আবার কেউ হুইল চেয়ারে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। অন্যরা রোগ যন্ত্রণায় কারাভ্যন্তরে কাতর হয়ে পড়ছেন। মির্জা আলমগীরকে চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর সমালোচনা করে রিপন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে হুইল চেয়ারে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। কিন্তু তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে আবারও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত। কারণ মির্জা আলমগীর হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে আটক রয়েছেন তিনি। রিপন বলেন, মির্জা আলমগীর ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, আবদুস সালাম পিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটির মেয়র আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সুচিকিৎসার অভাবে তাদের জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় নেতাদের পরিবার যেমন উৎকণ্ঠিত তেমনি আমরাও উদ্বিগ্ন। রিপন বলেন, সুচিকিৎসা না দেয়ায় বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, পিন্টুকে হত্যা ?করা হয়েছে। আমিও একই কথা বলছি। তাকে সুচিকিৎসা না দেয়ার তার মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তরসহ আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি জানিয়ে রিপন বলেন, আমরা সরকারের কাছে মানবিক আচরণের প্রত্যাশা করছি। কারণ বিরোধী নেতারা বেঁচে থাকলেই সরকার তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতায় অবতীর্ণ হতে পারবেন। কিন্তু মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া চরম অমানবিক। তিনি বলেন, রাজনীতিতে মানুষের ভিন্নমত থাকবে। রাজনীতি মানে এই নয় কাউকে সমালোচনা করলে জেলে ঢুকিয়ে রাখা। সরকার ভিন্নমতের লোকজনদের জেলখানায় ঢুকিয়ে রেখেছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কারাগারে ফেরত নেয়া হলো ফখরুলকে
কাশিমপুর কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা না দিয়ে চেকআপ শেষে বিকালে তাকে ফের কাশিমপুর কারাগারে ফেরত নেয়া হয়েছে। তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, মির্জা ফখরুলের অবস্থা এতটাই জটিল, যে কোন সময় ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ তার মস্তিষ্কের ধমনিতে (ক্যারটিড আর্টারি) দুটি ব্লক ধরা পড়েছে। অন্যদিকে তার হার্টের তিনটি ব্লকে রিং পরানো রয়েছে। তবে একটি ব্লক ৯০ ভাগ, যাতে রিং পরানো হয়নি। যে কোন সময় তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, আইবিএস, মেরুদণ্ড, দাঁতের সমস্যাসহ কয়েকটি রোগে আক্রান্ত। সমপ্রতি কাশিমপুর  থেকে তাকে দুইবার বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালেও আনা হয়। কিন্তু সেখানেও তার সুচিকিৎসা  মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসার জন্য মির্জা আলমগীরকে পুলিশের একটি প্রিজনভ্যানে করে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মেডিকেলে পাঠানো হয়। সকাল সোয়া ১০টায় প্রিজন ভ্যানটি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পৌঁছে। কারা চিকিৎসক মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মির্জা আলমগীরের ইন্টারনাল করোটিড আর্টারি (মাথায়) ব্লক রয়েছে। এছাড়া পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও হৃদ?রোগে ভুগছেন তিনি। তাকে ভাস্কুলার সার্জন, নিউরোলজিস্ট, গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্ট ও কার্ডিওলজিস্ট দেখানো দরকার। এদিকে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বিএসএমএমইউ-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মজিদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, মির্জা ফখরুলের গুরুতর কোন সমস্যা নেই। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে এ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার শরীরের কয়েকটি টেস্ট (পরীক্ষা) করা হচ্ছে। এদিকে মির্জা আলমগীরের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম জানান, দুদিন আগে তিনি দেখা করেছেন। তখন তার প্রেসার ছিল হাই। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেয়ার সময় তার চিকিৎসকরা যে লেভেলের মধ্যে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম হাসপাতালে অন্তত কয়েকদিন ভর্তি রেখে তার চিকিৎসার অধিকারটুকু সরকার এবং কারাকর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবে। আমরা তো পরিবারের সদস্য হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এটুকু মানবিকতা আশা করতে পারি। কিন্তু কি কারণে সে অধিকার তিনি পেলেন না। রাহাত আরা বেগম বলেন, কাশিমপুর কারাগার থেকে মেডিকেলে আনা হয় সাধারণ গাড়িতে। এসিতো দূরের কথা, গাড়ির ছোট ফ্যানটিও ঠিকমতো কাজ করছিল না। অথচ কাশিমপুর কারাগার থেকে যানজট পার হয়ে মেডিকেলে আনা-নেয়ায় তিন ঘণ্টা করে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। কোন অসুস্থ মানুষ এমন ভ্যাঁপসা গরম ও বদ্ধপরিবেশে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, টেলিভিশনে দেখলাম- মেডিকেল বোর্ড নাকি তেমন কোন গুরুতর সমস্যা পায়নি। আল্লাহ জানে উনার ভাগ্যে কি আছে। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর এমন কিছু রোগ আছে যার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া উচিত। আশা করি, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে জামিন কিংবা অনুমতি দেয়া হবে। এদিকে মির্জা আলমগীরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, অসুস্থ অবস্থায় যাতায়াতের কষ্টে তিনি আরও বেশি অসুস্থবোধ করছেন। কারাগারে ফেরত নেয়ার সময় তিনি চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, কাশিমপুর থেকে হাসপাতালে এসে চিকিৎসার কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারছেন না। এভাবে কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা নেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা করালে তিনি আর হাসপাতালে আসতে আগ্রহী নন। উল্লেখ্য, সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি পোড়ানোসহ ৭৯টি মামলার আসামি হয়ে প্রায় মাস ধরে কাশিমপুর কারাগার-২-এ অন্তরীণ রয়েছে তিনি। ইতিমধ্যে ৩০ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি মির্জা ফখরুলকে এক মামলায় জামিন দেয়া হয়। তিন মামলায় কেন তাকে জামিন দেয়া হবে না সে বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারিও করে। অবশ্য ওই তিন মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখায়নি পুলিশ। এ নিয়ে বর্তমান সরকারের আমলে ছয় দফা কারাভোগ করছেন মির্জা আলমগীর।

No comments

Powered by Blogger.