ব্যাংক ডাকাতিতে অংশ নেয় ১০ জন

রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠ আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিল ১০ ডাকাত। এরা সবাই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। মূলত ব্যাংক ডাকাতি করে তহবিল সংগ্রহ করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই ১০ ডাকাতকে শনাক্ত করার দাবি করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর এলাকা থেকে জসিম উদ্দিন ওরফে আসাদ (৩০) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসাদই নিজ হাতে ব্যাংক ম্যানেজারকে ছুরিকাঘাত করেছিল। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া জসিম উদ্দিন ব্যাংক ম্যানেজারকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতা তাকে ধাওয়া করলে সেখানে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় সহযোগীদের ছোড়া বোমার স্প্লিন্টার ও গুলি তার পায়ে লাগে। রক্তমাখা অবস্থায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে সে আশুলিয়ার শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে দুইদিন অবস্থানের পর সে পালিয়ে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ফুফুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সোমবার দিবাগত রাতে সেই ফুফুর বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা জঙ্গি সংগঠনের তহবিল সংগ্রহের জন্য ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। তহবিল সংগ্রহের জন্য এর আগেও তারা ছোটখাটো ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারের পর সবার বাসায় তল্লাশি করে তাদের ধর্মীয় নেতা ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীম উদ্দিন রহমানির বিভিন্ন বই পাওয়া গেছে। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জসিম উদ্দিন রাহমানি তাদের ধর্মীয় নেতা বলে জানিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করেও প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।
ডাকাতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংকের দারোয়ান সোহেলকে আটক করা হয়েছে। কারণ সে সুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় তাকে নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এখন তাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে  ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে সেদিনের কোন ফুটেজ সংগ্রহ করা যায়নি। সিসিটিভিতে ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ ছিল। এর পরের ভিডিও ফুটেজে কেন নেই তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্ব দেন আব্দুল্লাহ আল বাকী ওরফে মাহফুজ ওরফে হাফিজ নামে একজন। তার বাড়ি শেরপুর। তিনি জামায়াত-শিবিরের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে আনসারুল্লাহার উচ্চপর্যায়ের নেতা। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল সুমন। এই দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ডাকাতির ঘটনার পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। সূত্র জানায়, সর্বশেষ আসাদসহ এ ঘটনায় মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বোরহান মৃধা ও আরিফ নামে দুজনকে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে ধরিয়ে দেয়। সে সময় অজ্ঞাত এক যুবককে গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলে। পরবর্তীতে বাবুল সরদার ও মিন্টু প্রধান নামে দুজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ডাকাতির  সহযোগিতার ঘটনায় ব্যাংকের দারোয়ান সোহেলকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ২১শে এপ্রিল আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় ডাকাতরা হানা দিয়ে ক্যাশ লুটের চেষ্টা চালায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা ব্যাংকের ভেতরে ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ (৪৫), ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী বদরুল আলম (৩৮), ব্যাংকের গ্রাহক ব্যবসায়ী পলাশকে কুপিয়ে হত্যা করে। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে পালানোর সময় ডাকাতদের গুলি ও বোমার আঘাতে মারা যায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা মনির, জিল্লুর, জমির, নূর মোহাম্মদ ও আইয়ুব আলী নামে পাঁচ জন। এ ঘটনায় আহত হয় আরও অন্তত ১৬ জন।

No comments

Powered by Blogger.