বৃটেনের নির্বাচনের দিকে সিলেটের ‘কোটি চোখ’ by ওয়েছ খছরু

বৃটেনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে সিলেটের কোটি মানুষ। ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী পরিবারে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। আর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে সিলেট থেকে বৃটেন ছুটে গেছেন অনেকেই। তারা পছন্দের সিলেটি প্রার্থীর পক্ষে বিশেষ করে বাঙালি কমিউনিটির কাছে প্রচারণা চালিয়েছেন। জয় ঘরে তুলতে তারা অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও। বৃটেন-সিলেটের সেতুবন্ধন ক্রমেই সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। এর কারণ কয়েক লাখ সিলেটি বসবাস করেন স্বপ্নের শহর লন্ডনে। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বৃটেনের সঙ্গে সিলেটের সম্পর্ক (আত্মার সম্পর্কে) পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে সিলেট ও বৃটেন যেন একই সুতোয় গাঁথা। সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনা গাথাও একসঙ্গে। সিলেটের মানুষ সম্পর্কের কারণেই এতোদিন বাংলাদেশে নির্বাচন হলেই ছুটে আসতেন হাজার হাজার লন্ডন প্রবাসী। কেউ কেউ বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছেন। কিন্তু এবার বৃটেনের নির্বাচন নিয়ে সিলেটের স্থানীয় মানুষের কাছে আগ্রহ বেশি। নির্বাচন শুরু হওয়ার প্রায় ৬ মাস আগে বৃটেন নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গেছেন প্রবাসীরা। রুশনারা আলী, মিনা রহমানসহ কয়েক জন এমপি প্রার্থী সিলেটের স্বজনদের কাছে মতবিনিময় করে গেছেন। বৃটেনের এমপি প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর ছিল সিলেট। আর নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হওয়ার পর এবার সিলেট থেকে অনেকেই ছুটে গেছেন লন্ডনে। তারা সিলেটি প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এবার বৃটেনের নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১২ জন প্রার্থী প্রচারণায় নেমেছেন। এর মধ্যে লেবার দল থেকে আটজন, কনজারভেটিভ দল থেকে একজন ও লিবারেল  েেমাক্রেট দল থেকে তিনজন মনোনয়ন  পেয়েছেন। এরা হচ্ছেন, লেবার পার্টির রুশনারা আলী এমপি, টিউলিপ সিদ্দিক, ড. রূপা হক, ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, সুমন হক, আখলাকুল ইসলাম, কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মিনা রহমান, লিবারেল ডেমোক্রেট থেকে আশুক আহমদ এমবিই, প্রিন্স সাদিক চৌধুরী ও মোহাম্মদ সুলতান। এই প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই সিলেটের মানুষের কাছে অনেক প্রিয় ব্যক্তি। এক নামেই চেনেন সবাই তাদের। নির্বাচন এখন দরোজায় কড়া নাড়ছে। কিন্তু তার আগেই সিলেট থেকে ইতিমধ্যে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা লন্ডনে গেছেন। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতেই লন্ডন গেছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন সিলেটের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তিনি এ দুটি সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় শেষ করে লন্ডন গেছেন। যাওয়ার আগে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন, লন্ডনে অবস্থানরত সিলেটের মানুষের কাছে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে তিনি সেখানে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি নির্বাচন পর্যন্ত অবস্থান করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ও সিটি নির্বাচনে লন্ডনের নেতারা এসে এখানে প্রচারণা চালান। এবার তাদের প্রচারণায় অংশ নিতে তিনি লন্ডনে গেছেন। কামরান বৃটেনে  পৌঁছে রুশনারা আলীসহ বেশ কয়েকজন এমপি প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বৃটেনের নির্বাচনী ও প্রচারণায় অংশ নিতে লন্ডনে গেছেন। তিনি সেখানে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। এর আগে কয়েক দিন লন্ডনে অবস্থান করে বাঙালি কমিউনিটিদের কাছে প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন সিলেট-২ আসনের বর্তমান এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। এছাড়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান সহ ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী প্রচারনণা চালাতে বৃটেনে ছুটে গেছেন। এছাড়া এমপি প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে তাদের স্বজনরাও ছুটে গেছে বৃটেনে। সিলেটের প্রবাসীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, বৃটেন ও সিলেটের যে সম্পর্ক সেটি আরও সুদৃঢ় করতে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সিলেটিরা। দিন দিন সিলেটি বংশোদ্ভূত এমপি প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে লন্ডনে। আর প্রার্থী বাড়ার সংখ্যার পেছনে রয়েছে বৃটেন সরকারে বাঙালিদের ন্যায় সঙ্গত দাবি উপস্থাপন করা। সিলেটি প্রার্থীদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বৃটেন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। সহজ হবে ভিসা প্রাপ্তি প্রক্রিয়াও।
ভোটের আগে সিলেটবাসীর কাছে মিনা রহমানের আহ্বান: বৃটেনে আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির একমাত্র বাঙালি প্রার্থী মিনা রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে নির্বাচনে সিলেটবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বার্কিং-এ অবস্থানরত সিলেটীদের তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে মিনা রহমান বলেন, ‘আমি আপনাদের সন্তান। আমি আপনাদের দোয়া এবং ভালবাসা নিয়ে বৃটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বার্কিং আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছি। বৃহস্পতিবার বৃটেনে পার্লামেন্টে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রিয় দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া কামনা করছি। আমি যেন নির্বাচনে জয়লাভ করে আপনাদের কাছে আসতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার নির্বাচনের প্রচারণা আমি সিলেট থেকে শুরু করেছিলাম। নির্বাচনে জয়লাভ করে আপনাদের মাঝে আসতে চাই। সিলেটবাসীর ভালবাসায় আমার এত দূর আসা। বার্কিং-এ অবস্থানরত শুধু সিলেটীদের ভোটে আমি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবো। তাই সিলেটবাসীর কাছে আমার আহ্বান বার্কিং-এ অবস্থানরত আপনাদের আত্মীয়স্বজনদের আমাকে ভোট দিতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।’ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমার দল কনজারভেটিভ পার্টি বাঙালি কমিউনিটির সেবায় সর্বদা নিয়োজিত ছিল। আমি নির্বাচিত হলে বার্কিং-এর সকল বাঙালির সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকবো। বার্কিং-এর বাঙালি কমিউনিটির সুখে-দুঃখে পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।’

No comments

Powered by Blogger.