এক একর জমি পানির দামে বেচেন লতিফ সিদ্দিকী by সাঈদ আহমেদ

অনুসন্ধানে প্রমাণ পেয়েও মামলা করেনি দুদক
নেত্রকোনায় ৩টি গুদামসহ সরকারের প্রায় এক (০.৯৮) একর জমি পানির দামে বিক্রি করে দেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ বিষয়ে সব তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে মামলা করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অগ্রাহ্য করা হয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান কর্মকর্তার সুপারিশও। তবে সম্প্রতি ওই সুপারিশের ভিত্তিতে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা রুজুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পবিত্র হজ ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে বিচারের মুখোমুখি সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের ৩টি গুদামসহ ০.৯৮ একর জমি মাত্র ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। নেত্রকোনা জেলা শহরের সাতপাই মৌজায় সিএস খতিয়ান নং : ১৬,১৭,২০; এসএ খতিয়ান নং : ১; সিএস দাগ নং : ১৬০৬, ১৬০৭, ১৬৬৭, ১৬৬৯, ১৭৭১ ও ১৭৭৪ এবং এসএ দাগ নং : ৪৫৭৫-ভুক্ত ০.৯৮ একর জমির অবস্থান। এটির মালিক বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন। ২০১২ সালের ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে লতিফ সিদ্দিকী এ সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক পাল কমল চন্দ্রকে। তিনি দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত বছর ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনে। প্রতিবেদনে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা রুজুর সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্রীত জমিটি তৎকালীন ‘জুট বোর্ড অব পাকিস্তান’ পাটগুদাম নির্মাণ করার জন্য অধিগ্রহণ করে। ৪৫৭৫ দাগের ১.০১ একর সম্পত্তি সংস্থার। তবে ০.০৩ একর সম্পত্তি রাস্তার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি সাবেক জুট বোর্ড বর্তমানে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের (বিজেসি) দখলীয় সম্পত্তি। মোট জমির পরিমাণ ০.৯৮ একর। ওই জমিসহ তিনটি গুদাম মো. তারেক সালমান এবং সুধেন্দু শেখর রায়ের কাছে বার্ষিক ৭২ হাজার টাকায় ভাড়া ছিল। তারা যৌথভাবে এ সম্পত্তি কেনার জন্য তিনটি গুদামের মূল্যায়িত দর ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৬৭৬ টাকার অধিক মূল্যে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৯ টাকায় ক্রয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত দেন যে, বিক্রিতে সময়ক্ষেপণের ফলে ০.৮৫ একর জমি বেদখল হলে অবশিষ্ট জমি বেদখল হতে সময় লাগবে না। যে তিনটি গুদাম ৭২ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়েছে তদারকির অভাবে একসময় ভাড়াটিয়া যে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে এগুলোর মালিক বনে যাবেন না তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভাড়াটিয়াই উল্লিখিত ০.৯৮ একর জমি ক্রয় করতে চাইলে যৌক্তিক কারণে ভাড়াটিয়াই ক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন। গত ১৮/০৫/২০০৮ সালে ‘বিজেসি’র সংশোধিত সম্পত্তি বিক্রির নীতিমালায় বিজেসির সব সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। লতিফ সিদ্দিকী এ বিষয়ে তার সপক্ষে আরও উল্লেখ করেন, এ ক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হল, ভাড়াটিয়াদের কাছে তাদের প্রস্তাবে সম্পত্তি বিক্রি করা হবে কিনা- সেই সিদ্ধান্ত নেতিবাচক হলে টেন্ডারে যেতে হবে। টেন্ডার হলেই যে, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে তা ভাবার কারণ নেই। অতএব, ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে তা জেনে বুঝেই ০৭/০৭/১৯৯৪ সালে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক মূল্যায়িত ওই জমির মূল্যের ৩ গুণ ধার্য করে আবেদনকারীদের কাছে ০.৯৮ একর জমি বিক্রয়মূলে হস্তান্তর করার নিমিত্তে আদেশ প্রদান করেন লতিফ সিদ্দিকী। ওই সময় এ জমির মূল্য ধরা হয় ৫১ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৬ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৪ সালে মূল্যায়িত সম্পত্তির তিন গুণ মূল্যে জমিটি হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়ে এবং এ বিষয়ে প্রক্রিয়া গ্রহণের মাধ্যমে স্বীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ১৯৪৭ সনের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা রুজুর এ সুপারিশ সে সময় আমলে নেয়নি দুদক। তবে ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক সম্প্রতি মামলা রুজুর উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু যুগান্তরকে বলেন, এরকম কোনো ফাইল আমার নজরে পড়েনি। তবে আমি বেশকিছু দিন দেশের বাইলে ছিলাম। তখন যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, আমি জানি না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান।

No comments

Powered by Blogger.