ডিজিটাল ট্রাফিক পদ্ধতি কাজে আসেনি : তীব্র যানজট

যানজটে স্থবির বনানী। শাহবাগ পর্যন্ত ভোগান্তির চিত্র ছিল একই
রাজধানীতে সোমবার তীব্র যানজট হয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্র ছিল গাড়িজট। নগরবাসীর চলাচল এক প্রকার থমকে গিয়েছিল। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টা, ক্ষেত্রবিশেষে দুই ঘণ্টাও সময় লেগেছে। হঠাৎ তীব্র যানজটের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, ডিজিটাল সিগন্যাল সিস্টেম চালু করার কারণেই মূলত এই যানজট হয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় কাকলী মোড় থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত পরীক্ষামূলক এই সিস্টেম চালু করা হয়। সোমবার যানজটের মাত্রা অসহনীয় পর্যায় পৌঁছানোয় সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম বাতিল করে আবার পুরাতন সিস্টেম সচল করে। এরপর পরই যানজট কমে, নগরজীবনে স্বস্তি ফিরে আসে।
গতকাল সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীর ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব এলাকার সড়কগুলোয় তীব্র যানজট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা, কুড়িল, পুরান ঢাকা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমণ্ডি, মিরপুর, মতিঝিল এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কেও ছিল তীব্র যানজট। গাড়ি একটার পেছনে অন্যটি লেগে ছিল। অফিসগামী যাত্রীদের অনেককে যানবাহন ছেড়ে হেঁটে চলাচল করতেও দেখা গেছে।
মৎস্য ভবনের সামনে সকাল সোয়া ১০টায় কথা হয় ঢাকা ওয়াসার সেগুনবাগিচা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। হেঁটে চলাচলের কারণ জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ফার্মগেটের বাসা থেকে পৌনে ৯টায় রওনা হয়ে সোয়া ১০টায় শাহবাগ পৌঁছায়। এরপর আর গাড়ি চলছে না। অফিস টাইম রাস্তায় নষ্ট হচ্ছে ভেবে ড্রাইভারকে গাড়ি বাসায় নিয়ে যেতে বলে হেঁটে চলে এসেছি।
বেসরকারি কোম্পানির মাইক্রোবাসের ড্রাইভার আমির হোসেন যুগান্তরকে জানান, সকাল ১০টায় কমলাপুর থেকে খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা হয়ে কুড়িল পৌঁছাতে বাজে সোয়া ১২টা। অন্যান্য দিন যেখানে সর্বোচ্চ একঘণ্টা সময় লাগে।
ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) যুগ্ম-কমিশনার মোসলেউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে আজ এত যানজট হয়েছে। সকালে নগরীর যানজটের তীব্রতা লক্ষ্য করে সিটি কর্পোরেশনকে বলে নতুন ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম বন্ধ করে পুরনো সিস্টেম সচল করা হয়। তিনি বলেন, এরপর রাজধানীর যানজট স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। ডিএমপির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসবো। জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে এমন কোনো সিস্টেম রাজধানীতে চালু করা হবে না।
রাজধানীর ডিজিটাল সিগন্যাল সিস্টেম প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সিহাব উল্লাহ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে মাঝে মধ্যে অসহনীয় যানজট হয়, গতকালের যানজটও অসহনীয় ছিল। ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি, রাজধানীতে এই সিস্টেম চালু করা হলে ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেমের উন্নতি ঘটবে। এ বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে পরে বিস্তারিত কথা বলবো।
গতকাল রাজধানীর অসহনীয় যানজটের চিত্র দেখতে সড়কে নামেন ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া। মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং প্রত্যক্ষদর্শী, যাত্রী এবং ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে ডিজিটাল সিস্টেম বন্ধ করে পুরনো সিস্টেম চালু করার নির্দেশ দেন।
রাজধানীর মগবাজারে গতকাল বেলা ১১টায় যানজটে পড়ে বাস যাত্রী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মগবাজার মোড়ে দীর্ঘসময় ধরে ট্রাফিক সিগন্যাল ছিল। এ সময় ৬ নম্বর বাসের যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে ট্রাফিক পুলিশকে গালাগালি করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ ওই বাসটি আটক করে। আরও উত্তেজিত হয় যাত্রীরা। এ সময় পুলিশ ও যাত্রীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ১৫ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

No comments

Powered by Blogger.