ছিটমহলবাসীর ইচ্ছায় নাগরিকত্ব

ভারতের ছিটমহলে বসবাসকারীরা এখন বাংলাদেশের নাগরিক আর বাংলাদেশের ছিটমহলে বসবাসকারীরা ভারতের নাগরিক হবেন। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলে বসবাসকারীদের নাগরিকত্ব নির্ধারণে নাগরিকদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রটোকল টু দ্য এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া কনসার্নিং দ্য ডিমার্কেশন অব দ্য ল্যান্ড বাউন্ডারি বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া অ্যান্ড রিলেটেড ম্যাটারস’ অনুসমর্থন প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে, তাতে এ কথা বলা হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভারতের ছিটমহলের মানুষ এখন বাংলাদেশের নাগরিক ও বাংলাদেশের ছিটমহলে থাকা মানুষ ভারতের নাগরিক হবেন। তবে কেউ যদি ইচ্ছা করেন তিনি ভারতের নাগরিক হবেন না, বাংলাদেশে থেকে যাবেন, তবে তিনি তা পারবেন। আবার কেউ যদি মনে করেন বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না, ভারতেই থাকবেন, সেটাও তার ইচ্ছা। এ ক্ষেত্রে নাগরিকের ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে। তিনি বলেন, প্রটোকল অনুসমর্থন পাওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশ সফরে এলে ‘একচেঞ্জ অব ইন্সট্রুমেন্ট (প্রটোকলের দলিলাদি বিনিময়) হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কবে নাগাদ ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় ভূমি ফিরিয়ে দেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা আলোচনায় আসেনি। এখন বাস্তবায়নে যেটুকু সময় লাগে। এখন তো মতানৈক্যের কোন প্রশ্ন নেই, এভ্রিথিং ইজ এগ্রিড। অনুমোদন প্রক্রিয়া কমপ্লিট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্থল সীমানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। স্বাক্ষরের পর দুই দেশের পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুসমর্থনের বিষয় ছিল। বাংলাদেশের পার্লামেন্ট ১৯৭৪ সালের ২৮শে নভেম্বর এটি অনুসমর্থন করে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবরণ ও ভারত চুক্তিটি অনুসমর্থন না করায় পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ভারত অতিসমপ্রতি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে চুক্তি অনুসমর্থন করেছে। চুক্তিটি কার্যকর করতে একটি প্রটোকল করা হয়েছিল। আলোচনার মাধ্যমে ২০১১ সালে প্রটোকলটি চূড়ান্ত করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছিলেন। ভারত মূল চুক্তি অনুসমর্থন না করায় প্রটোকলটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। তাই এতদিন এটি মন্ত্রিসভায় আনা হয়নি। প্রটোকলের বিষয়বস্তুর বিষয়ে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, প্রটোকলের আওতায় দুই দেশের মধ্যে থাকা ছিটমহল পারস্পরিক বিনিময় হবে। বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতের ভূখণ্ড ভারত ও ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ভূখণ্ড বাংলাদেশ পেয়ে যাবে। মন্ত্রি পরিষদ সচিব বলেন, অপদখলীয় ভূমির ক্ষেত্রেও যে দেশের জায়গা তারা  পেয়ে যাবে। তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। এ ছাড়া সীমান্তে  ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার জায়গা চিহ্নিত করা ছিল না। দুই দেশ সেটা চিহ্নিত করেছে। প্রটোকল অনুমোদনের মাধ্যমে এটা ফাইনাল হয়ে যাবে। বর্ডার এলাকায় ৩৫টি স্ট্রিট ম্যাপ আছে। এখন দুই দেশের স্বাক্ষরের মধ্যে এগুলো চূড়ান্ত করবে। ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমির পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারতে থাকা ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ১৬০ একর ভূমির মালিকানা পাবে বাংলাদেশ। এ ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৬ জন। অপরদিকে বাংলাদেশে থাকা ৫১টি ছিটমহলের সাত হাজার ১১০ একর জমি ভারতের অধীনে চলে যাবে। এ ছিটমহলগুলোতে মোট জনসংখ্যা ১৪ হাজার ৯০। বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বেশি পাবে। তিনি বলেন, অপদখলীয় ভূমির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুই হাজার ২৬৭ দশমিক ৮৮ একর জমি ভারতের দখলে রয়েছে। অপরদিকে, ভারতের দুই হাজার ৭৭৭ দশমিক ১৪ একর জমি বাংলাদেশের দখলে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের বেশির ভাগ জায়গা চিহ্নিত থাকলেও ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকা চিহ্নিত করা ছিল না। পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার ও ফেনীর কিছু এলাকায় এই সীমানা এতদিন চিহ্নিত ছিল না। এ ছাড়া তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলেও জানান তিনি। মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, প্রটোকলের অধীনে আঙ্গরপোতা- দহগ্রামে বসবাসকারীরা ভারতের তিনবিঘা করিডোর দিয়ে এখন সবসময় চলাচল করতে পারবে। এখন প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বেশির ভাগ জায়গা চিহ্নিত থাকলেও ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকা চিহ্নিত করা ছিল না। প্রটোকল অনুমোদনের পর এই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। বৈঠকে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ (সর্বাধিনায়কতা) আইন-২০১৫ এবং প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ (সংশোধন) আইন ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৭৮ সালে ইংরেজি ভাষায় সামরিক অধ্যাদেশ হিসেবে এ দুটি আইন জারি হয়। এজন্য মন্ত্রিসভার পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত  মোতাবেক আইন দুটি বাংলা ভাষায় রূপান্তরের জন্য সংশোধনীর প্রয়োজন হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমের ৪ থেকে ৬ ই এপ্রিল পর্যন্ত ওমান সফর সম্পর্কে অবহিত করা হয়। মন্ত্রীসভার সদস্য ও সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.