মাইক্রোবাসে আদিবাসী তরুণী ধর্ষণ- জড়িত যুবকদের চিহ্নিত করার দাবি পুলিশের

রাজধানীতে মাইক্রোবাসে তুলে আদিবাসী এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত যুবকদের চিহ্নিত করার দাবি করেছেন মামলাটির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ওই যুবকদের খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। তবে চিহ্নিত যুবকেরা কারা, সে ব্যাপারে এখনই কিছু জানাতে অপারগতা জানিয়েছেন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভাটারা থানা এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের একটি দোকানের কর্মী ওই গারো তরুণীকে মাইক্রোবাসে তুলে গণধর্ষণ করে কয়েকজন যুবক। পরে তাঁকে উত্তরা এলাকায় মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ওই তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় ওই তরুণীকে নিয়ে তাঁর পরিবার মামলা করতে বিভিন্ন থানায় যায়। কিন্তু এক থানার পুলিশ মামলা না নিয়ে আরেক থানায় যেতে বলে তাঁদের হয়রানি করে। পরে শুক্রবার ভাটারা থানার পুলিশ মামলা নেয়।
পুলিশ যমুনা ফিউচার পার্কের বিভিন্ন স্থান ও ফিউচার পার্কসংলগ্ন বিভিন্ন ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। পুলিশ এসব ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। বিষয়টি তদারকির জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
ধর্ষণ ও নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস)। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত মাইক্রোবাসে পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হন এক আদিবাসী তরুণী। বিক্ষোভকারীরা ওই তরুণীর ধর্ষণকারীদের বিচার দাবি করে l প্রথম আলো
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তাঁদের অবয়বও স্পষ্ট। ফুটেজ আরও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই গ্রেপ্তারি অভিযান শুরু হবে।
তবে কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
ওই তরুণীর বড় বোন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর আমার বোন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। জানি না পুলিশ কী করছে। তবে আসামিরা ধরা না পড়া পর্যন্ত আমাদের মনে কোনো শান্তি নাই।’ তিনি বলেন, ‘টার্গেট করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এখন আদিবাসী বলেই কি এমনটা করা হলো, নাকি অন্য কোনো কারণ, তা বুঝতে পারছি না।’
নিন্দা-প্রতিবাদ: গারো তরুণীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ যৌন-সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে গতকালও বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণবিক্ষোভ করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, যৌন-সন্ত্রাসের কবল থেকে প্রথম শ্রেণিতে পড়া শিশু থেকে তরুণী, বৃদ্ধ নারী—কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। এ দেশের মানুষের নাগরিক মর্যাদা নেই।
বিকেল চারটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র। সমাবেশে বক্তারা গারো তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ছাড়া গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.