বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি, অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বস্তি by শুভংকর কর্মকার

এক বছর পর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বড় এই বাজারটিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়ে আসছিল। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় মাসে এসে রপ্তানিতে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৯০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। পরিমাণের দিক দিয়ে আলোচ্য সময়ে ৩০ কোটি ৬৭ লাখ বর্গমিটার পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ এমন সময়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরল, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাক আমদানি কমিয়েছে। বছরের প্রথম দুই মাসে দেশটি ১ হাজার ২৭৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের পোশাক কিনেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের ১ হাজার ৩০৯ কোটি ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৬২ শতাংশ কম। আর পরিমাণের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ৪০৩ কোটি বর্গমিটার পোশাক আমদানি করেছে। এটি আবার ২০১৪ সালের একই সময়ের ৪১২ কোটি বর্গমিটারের চেয়ে ২ শতাংশ কম।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গতকাল শনিবার এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। অটেক্সা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক, বস্ত্র ও পাদুকার আমদানির আর্থিক মূল্য ও পরিমাণ—এই দুই হিসাবেই নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করে থাকে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমএর নেতারা জানান, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধস এবং পরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমতে থাকে। ভবনধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড শেয়ারড বিল্ডিংয়ে (একই ভবনে একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকা) কাজ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে পরে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও এনটিপিএর আওতায় পরিচালিত কারখানা পরিদর্শন কর্মসূচির ইতিবাচক ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। অবশ্য সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় আবারও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়াটা খুবই ইতিবাচক। তবে এসব ক্রয়াদেশ গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এসেছিল। আর গত তিন মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রয়াদেশ কম এসেছে। সেই হিসাবে মে-জুনে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে যেতে পারে।
অটেক্সার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালের প্রথম দুই মাসে ৮৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। গত বছর একই সময়ে সেটি ২ দশমিক ০৯ শতাংশ কমে ৮৮ কোটি ১২ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।
এদিকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে ৮ হাজার ১৭৮ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৪৮৩ কোটি ডলার বা ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে চীন সবার চেয়ে এগিয়ে। গত বছর দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের বা ৩৬ দশমিক ২৩ শতাংশ রপ্তানি করেছে। অবশ্য চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীনের প্রবৃদ্ধি কমেছে। এ সময়ে দেশটি ৪৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। ফলে পরিমাণে কম হলেও প্রবৃদ্ধিতে চীনের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
অবশ্য আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধির বিচারে চীনের থেকে এগিয়ে থাকলেও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বছরের প্রথম দুই মাসে ভারত ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর ভারত ৩৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে ১৫২ কোটি, ইন্দোনেশিয়া থেকে ৭৯ কোটি, মেক্সিকো থেকে ৫৪ কোটি ও কম্বোডিয়া থেকে ৩৫ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি অবস্থানে আছে চীন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। পরের তিন অবস্থানে আছে ভারত, মেক্সিকো ও কম্বোডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.