ইয়েমেন থেকে আরেক দুঃসংবাদ by মিজানুর রহমান

ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলা বন্ধে জাতিসংঘের আহবান
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস না থাকায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল সেখানে নিযুক্ত অনারারি কনসাল। বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশীদের সম্মানীয় ওই দূত ও তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছিল সরকার। বয়োজ্যেষ্ঠ কনসাল জেনারেল এবং তার ছেলের ফোন ও ই-মেইল সংযুক্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘হেল্পলাইন’ চালুর ঘোষণা এসেছিল। ৩১শে মার্চের ওই সরকারি ঘোষণার পর থেকেই ফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। আটকা পড়া বাংলাদেশের কাছ থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া সংক্রান্ত অব্যাহত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে সরকার জানতে পারে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল সালেহ আল ঘালেবি মারা গেছেন। ১লা এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করলেও বাংলাদেশ গতকালই দুঃখজনক ওই খবরটি পায়। পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন ইয়েমেনের ওই সম্মানীয় নাগরিক। দেশটির রাজধানী সানায় তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বাবার মৃত্যু-পরবর্তী বিভিন্ন কাজে স্বভাবতই কনসাল জেনারেলের শোকাহত ছেলে মোহাম্মদ আল ঘালেবি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হেল্পলাইনে থাকা তার ফোন নম্বরগুলোও ব্যস্ত হয়ে যায় জানিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, বিয়োগান্তক ওই ঘটনাটি জানার পর থেকে সরকার ভিন্ন ফর্মে বাংলাদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টায় রয়েছে। তা ছাড়া হেল্পলাইনের অন্য নম্বরগুলো ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইয়েমেনের বাংলাদেশীদের উদ্ধারের বিষয়টি মনিটর করতে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম কাজ করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে কর্মীদের উদ্ধার পরিকল্পনায় বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে। কুয়েত মিশনের একজন কর্মকর্তা ইয়েমেনের এডেন বন্দরের কাছে জেবুতিতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশীদের নৌপথে জেবুতি নিয়ে আসার একটি পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা স্থগিত রেখে সানায় সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুমিত নিয়ে একটি বিশেষ বিমান পাঠানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন, পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হওয়ায় উদ্ধার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অবশ্য অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের এখনও বের করে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশও সেটি পারবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কূটনীতিক।
ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান রেডক্রসের
ওদিকে ইয়েমেনের ‘ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি’ মোকাবিলার সুযোগ করে দিতে ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে রেডক্রস। সহায়তা সংগঠনটির মধ্যপ্রাচ্য কর্মকাণ্ডের প্রধান রবার্ট মার্দিনি বলেন, অবিলম্বে লড়াই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন যাতে করে সব থেকে আক্রান্ত এলাকার পরিবারগুলো খাবার পানি বা স্বাস্থ্যসেবা নিতে বের হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যেসব হাসপাতাল আহতদের সেবা দিচ্ছে তাদের ওষুধের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। আর অ্যাডেনের রাস্তাগুলো মৃতদেহে ঢেকে গেছে। মার্দিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সহায়তা দ্রব্যাদি আর শৈল্যচিকিৎসকদের অবশ্যই দেশটিতে ঢুকতে দিতে হবে আর নিরাপদে সর্বাধিক আক্রান্ত এলাকাগুলোতে গিয়ে সহায়তা দেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। আর তা না হলে আরও মানুষ প্রাণ হারাবে। আহতদের বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে যদি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছায়, কয়েক দিন পর নয়। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস আরও জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন এলাকায় জ্বালানি ও খাবার পানিরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, লড়াইয়ে আহত ২০০০ থেকে ৩০০০ ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছে তারা। ৪৮ টন মেডিক্যাল দ্রব্যাদি আর শৈল্য চিকিৎসার সরঞ্জাম পৌঁছানোর জন্য অবিলম্বে স্থল, নৌ ও আকাশপথ খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

No comments

Powered by Blogger.