বিএনপি কার্যালয়ে অন্যরকম দৃশ্য

শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে কার্যালয়ের তালা কেটে
ভেতরে ঢোকেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা
দীর্ঘ তিন মাস পর ফের সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ৯২ দিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান ফটকের তালা কেটে কার্যালয় খোলেন দলের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কার্যালয়ে ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলে। তবে সকাল থেকেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন সারির নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে আসতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে পেয়ে একে অপরে কোলাকুলি করেন। কেউ কেউ একে অপরের সঙ্গে ছবি তুলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতের হাজিরা শেষে পল্টন কার্যালয়ে আসবেন- এমন সংবাদের ভিত্তিতে পল্টন এলাকা ও এর আশপাশেও নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে হাজিরা শেষে বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া। শিগগিরই কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এদিকে কার্যালয়ের সামনে ফের মোতায়েন করা হয়েছে এপিসি, জলকামান, পুলিশ ভ্যান। রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশসহ অর্ধশতাধিক পোশাকধারী পুলিশও। বেলা ১টার দিকে কার্যালয়ের সামনে থেকে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সরদার নুরুজ্জামানকে আটক করে ডিবি পুলিশ। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের ধোয়া-মোছার কাজ করছেন কর্মচারীরা। দীর্ঘ তিন মাসের জমানো ধুলার আস্তরণ পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন। কার্যালয়ের আসবাবপত্র, চেয়ার, টেবিল, দরজা, জানালাও পরিপাটি করা হয়। তবে গতকাল পাঁচতলা ওই ভবনের শুধু নিচতলা ও তিনতলা আর সিঁড়িগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনের কক্ষটিও পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। চারতলা ও পাঁচতলায় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক, জাসাস ও মহিলা দল, শ্রমিক দলের দপ্তর খোলা হয়নি। এ ছাড়া দোতলার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কক্ষটিও খোলা হয়নি। এদিকে ৩রা জানুয়ারির পর থেকে মিডিয়া কর্মীরাও নয়াপল্টনমুখী হননি। গতকাল থেকে বিএনপির কার্যালয় ঘিরে মিডিয়া কর্মীদেরও আনাগোনাও বেড়েছে। টিভি ক্যামেরা আর ফটো সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাংবাদিকরা নয়াপল্টনে যান। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় কার্যালয়টি খোলার পর রাত ১০টার দিকে বন্ধ করা হয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধোয়া-মোছার কাজ চলে। দলের নেতাকর্মীরা আসছেন। শিগগিরই দাপ্তরিক কাজকর্মও শুরু হবে। নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। দুপুরে পুলিশ দলের একজন ছাত্রদল নেতাকে আটক করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মহিলা দলের নেত্রী বিলকিস নার্গিস জানান, অফিস এতদিন বন্ধ থাকায় এখন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হচ্ছে। ধীরে ধীরে দলের বিভিন্ন সংগঠনের দপ্তরগুলোর তালা খুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার উপযোগী করা হবে। আবারও নেতাকর্মীরা আসবেন। দলের কার্যালয় এভাবে চাঞ্চল্য ফিরে পাবে। সকাল থেকে কার্যালয়ে আসেন বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদ, সাবেক এমপি আবেদ রেজা, বিলকিস ইসলাম, শিরিন জাহান, ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান সম্রাট, আমিনুল ইসলাম, সাযযাদ জামান, মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মাহতাব হোসেন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদল সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান, সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, অর্থ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, ছাত্রনেতা রজিবুল ইসলাম, যুবদল নেতা দিন মোহাম্মদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হোসেন মৃধা, যুবদল নেতা শহীদুল্লাহ তালুকদার, বিএনপি নেতা খলিলুর রহমানসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী কার্যালয়ে আসেন। তারা কিছুসময় কার্যালয়ে অবস্থান করে ফের ফিরে যান।
গত ৩রা জানুয়ারি রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে অসুস্থ অবস্থায় নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে আটক করে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাই ডিবি পুলিশ। এরপর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা হয় এসিপি, জলকামান, রায়ট কার ও পুলিশ ভ্যান। এক প্লাটুন পোশাকধারী পুলিশ কার্যালয়ের সামনে সার্বক্ষণিক পাহারায় ছিল। বিরোধী জোটের আন্দোলন চলাকালীন দলটির কোন নেতাকর্মীকে নয়াপল্টনমুখী হতে দেখা যায়নি। এদিকে ২রা মার্চ দুপুরে হঠাৎ করেই কার্যালয়ের সামনে থেকে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়। কার্যালয়ের সামনে জলকামান ও পুলিশ ভ্যানও সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর শনিবার  সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্যালয় খুলতে যান আসাদুল করিম শাহীনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

No comments

Powered by Blogger.